পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায় অস্ত্রের মুখে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষককে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। বন্দুকধারীরা দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি ক্যাথলিক স্কুলে হামলা চালিয়ে তাদেরকে অপহরণ করে।সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ধারাবাহিক সহিংসতার মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় গণ-অপহরণের ঘটনা। আর এসব অপরাধ আফ্রিকার এই দেশটির নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, নাইজেরিয়ায় বন্দুকধারীরা উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি ক্যাথলিক স্কুল থেকে অন্তত ২২৭ শিক্ষার্থী ও শিক্ষককে অপহরণ করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির খ্রিস্টান সংগঠন ক্রিশ্চিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব নাইজেরিয়া (সিএএন)।
প্ল্যাটফরএকইসঙ্গে চলতি সপ্তাহে একের পর এক স্কুলে হামলার পর দেশের ৪৭টি কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এছাড়া নাইজার প্রদেশে শুক্রবারের এই হামলাটি গত বছরের মার্চে কাদুনা প্রদেশে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অপহরণের পর সবচেয়ে বড় গণ-অপহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ক্রিশ্চিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব নাইজেরিয়ার (সিএএন) নাইজার শাখার চেয়ারম্যান রেভারেন্ড বুলুস দাউয়া ইয়োহান্না বলেন, তিনি স্কুলটি পরিদর্শন করেছেন। তার দাবি, কিছু শিক্ষার্থী পালিয়ে বাঁচতে পেরেছে। যদিও এর বেশি বিস্তারিত আর কিছু জানাননি তিনি। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন,‘আমাদের হিসাবে ২১৫ জন শিক্ষার্থী এবং ১২ জন শিক্ষককে সশস্ত্র লোকজন অপহরণ করেছে।’ এর আগে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ সেন্ট মেরিজ স্কুল থেকে অপহরণের ঘটনা নিশ্চিত করলেও কোনও সংখ্যা তারা জানায়নি।
রয়টার্স বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নাইজেরিয়ায় খ্রিস্টানদের ওপর নিপীড়ন বন্ধে দ্রুত সামরিক পদক্ষেপ নেয়ার হুমকি দেয়ার পর থেকেই দেশটির নিরাপত্তা পরিস্থিতি আন্তর্জাতিকভাবে আরও বেশি আলোচনায় রয়েছে।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র ও নাইজেরিয়ার মধ্যে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পর পেন্টাগনের প্রধান পিট হেগসেথ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, তিনি নাইজেরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেছেন এবং খ্রিস্টানদের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। নাইজেরিয়া সরকার অবশ্য ট্রাম্পের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এদিকে শুক্রবারের এই হামলার পর অপহৃতদের উদ্ধারে নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে আশপাশের জঙ্গলঘেঁষা এলাকা ঘিরে তল্লাশি চালাচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। নাইজার প্রাদেশিক সরকার জানিয়েছে, সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় বোর্ডিং স্কুলগুলো বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, কিন্তু ওই ক্যাথলিক স্কুল তা মানেনি।
গত সপ্তাহেও এই ধরনের বেশ কয়েকটি হামলা হয়েছে। গত সোমবার কেব্বি প্রদেশের একটি বোর্ডিং স্কুল থেকে ২৫ জন ছাত্রীকে অপহরণ করা হয়। এছাড়া কওয়ারা প্রদেশের একটি গির্জায় হামলা চালিয়ে ৩৮ জন উপাসনাকারীকে বন্দুকধারীরা অপহরণ করেছে বলে জানিয়েছেন গির্জার এক কর্মকর্তা।
তিনি জানান, প্রত্যেক উপাসনাকারীর জন্য ১০ কোটি নাইরা (প্রায় ৬৯ হাজার ডলার) মুক্তিপণ দাবি করেছে অপহরণকারীরা।
ধারাবাহিক এই হামলার পর নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবু দক্ষিণ আফ্রিকা ও অ্যাঙ্গোলায় তার সফর বাতিল করেছেন। জি২০ সম্মেলন এবং আফ্রিকান ইউনিয়ন–ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ বৈঠকে অংশ নেয়ার জন্য দেশ দুটিতে যাওয়ার কথা ছিল তার।
