চৌধুরী নাফিস সরাফাত। ফাইল ছবি
পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিস সরাফাতসহ চারজনের বিরুদ্ধে ১ হাজার ৬১৩ কোটি টাকার মানিলন্ডারিং মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশান থানায় এ মামলা করা হয়। আজ শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানায় সিআইডি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সিআইডির ফাইন্যানশিয়াল ক্রাইম ইউনিট পরিচালিত প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, চৌধুরী নাফিস সরাফাত তার সহযোগী ডক্টর হাসান তাহের ইমামকে সাথে নিয়ে ২০০৮ সালে রেইস ম্যানেজমেন্ট পিসিএল নামে একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির লাইসেন্স নেন। প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরুর পর ২০১৩ সালের মধ্যেই ১০টি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডে সম্পদ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পায়।
এতে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির অধীনে ১৩টি ফান্ড রয়েছে। মূলত এ মিউচুয়াল ফান্ডগুলোকে অবৈধ ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করেছিলেন চৌধুরী নাফিস সরাফাত ও তার সহযোগীরা। চৌধুরী নাফিস সরাফাত তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহীদ ও সহযোগী ডক্টর হাসান তাহের ইমামের সঙ্গে মিলে ফান্ডের অর্থ বিনিয়োগ করে তৎকালীন ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) শেয়ার কেনেন এবং পরবর্তীতে ব্যাংকটির পর্ষদের পরিচালক পদ লাভ করেন। এমনকি কৌশলে চৌধুরী নাফিস সরাফাত তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহীদকে সাউথইস্ট ব্যাংকেরও পরিচালক বানান।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, অভিযুক্তরা চতুরতার সাথে ফান্ডের টাকায় মাল্টি সিকিউরিটিজ নামক একটি ব্রোকার হাউজ কিনে তার ট্রেড লাইসেন্সের মাধ্যমে প্রতারণাপূর্বক ফান্ডের অর্থ হাতিয়ে নেন। এছাড়াও চৌধুরী নাফিস সরাফাত পদ্মা ব্যাংকের টাকা দিয়ে পদ্মা ব্যাংক সিকিউরিটিজসহ তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটি (নিবন্ধন-২০০৭) নামীয় ফান্ড ক্রয় বা বিনিয়োগ করেন যার অধীন একাধিক ফান্ড রয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, জাল-জালিয়াতির ব্যাপ্তি এতই বিস্তৃত ছিল যে, বিও ও অন্যান্য ব্যাংক হিসাব খোলা ও পরিচালনাসহ রাজউক থেকে একাধিক প্লট হাতিয়ে নিয়ে বিভিন্ন নামীয় প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে বিদেশে অর্থপাচারের পথ সুগম করেছিলেন অভিযুক্তরা।
সামাজিক যোগাযোগ এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে চৌধুরী নাফিস সরাফাত ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বেস্ট হোল্ডিংসের বন্ডে ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে চাপ প্রয়োগ, বিদেশে অর্থপাচার এবং একাধিক বাড়ি–ফ্ল্যাট ক্রয়সহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশিত হয়। এসব অভিযোগ প্রকাশের প্রেক্ষিতেই সিআইডির ফাইন্যানশিয়াল ক্রাইম ইউনিট মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অনুসন্ধান শুরু করে।
অনুসন্ধানকালে চৌধুরী নাফিস সরাফাত, তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহীদ, ছেলে রাহীব সাফওয়ান সারাফাত চৌধুরী এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে তপশিলি ব্যাংকসমূহে মোট ৭৮টি হিসাব পরিচালিত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। উক্ত হিসাবসমূহে মোট প্রায় ১ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা জমা এবং প্রায় ১ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এরমধ্যে চৌধুরী নাফিস সরাফাত, তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহীদ এবং ছেলে রাহীব সাফওয়ান সারাফাত চৌধুরীর নামে মোট ২১টি হিসাব চলমান রয়েছে, যার বর্তমান স্থিতি মাত্র ২৯.২১ লাখ টাকা। এসব হিসাবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকা লেনদেন হওয়ায় উক্ত হিসাবসমূহ সংক্রান্ত তথ্য ও দলিলাদি সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
অনুসন্ধানকালে চৌধুরী নাফিস সরাফাত ও তার স্ত্রীর নামে দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য পেয়েছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। প্রাথমিক অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে সর্বমোট এক হাজার ৬১৩ কোটি ৬৮ লাখ ৬৪ হাজার ৬৫৯ টাকা অর্জন মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫) এর ২(শ) (৫) (৬)৩ (১৪) ধারায় উল্লিখিত সম্পৃক্ত অপরাধ ‘প্রতারণা’, ‘জালিয়াতি’ এবং ‘দেশি ও বিদেশি মুদ্রা পাচার’ এর অধীন হওয়ায় একই আইনের ৪ (২) ধারায় চৌধুরী নাফিস সরাফতসহ তার ৪ জন সহযোগীদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যানশিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
