বুধবার, ২৬শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

পশ্চিমবঙ্গে ধ্বংসলীলা, দার্জিলিংয়ে নিহত বেড়ে ২৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
নভেম্বর ২, ২০২৫ ১১:২০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

টানা প্রবল বর্ষণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পাহাড়ি ও সমতল অঞ্চলজুড়ে একযোগে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। রাজ্যের দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার জেলাজুড়ে পাহাড়ধস, নদীভাঙন ও বন্যার দাপটে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মহানন্দা, তিস্তা, জলঢাকা, তোর্সা, রায়ডাকসহ একাধিক নদীর পানি বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছেছে। ডুয়ার্সের বহু গ্রাম এখন কার্যত পানির নিচে।

দার্জিলিং জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ জনে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, রোববার রাত পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ছিল ১৭। কিন্তু সোমবার সকালে নতুন করে উদ্ধার হওয়া দেহগুলোর পর সেই সংখ্যা আরও বেড়েছে।

প্রশাসনের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, অনেক এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় প্রাথমিকভাবে সঠিক হিসেব পাওয়া যায়নি। এখন যেভাবে উদ্ধারকাজ এগোচ্ছে, তাতে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

কার্সিয়ং জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক রায় জানিয়েছেন, বেশ কিছু জায়গায় ভূমিধসে ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং উদ্ধারকার্য এখনো চলছে। পাহাড়ি রাস্তা ও সেতুর ক্ষতি এতটাই ব্যাপক যে অনেক জায়গায় পৌঁছানোই দুষ্কর হয়ে পড়েছে

উত্তরবঙ্গের পুলিশ প্রধান রাজেশ কুমার যাদব জানান, পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে প্রশাসন। এনডিআরএফ, পুলিশ ও সিভিল ডিফেন্সের দল নিরলসভাবে কাজ করছে। তিনটি এনডিআরএফ টিম ইতোমধ্যেই মোতায়েন করা হয়েছে।

দার্জিলিং জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড. প্রীতি গোয়েল নিজে পরিস্থিতির তদারকি করছেন। তিনি জানান, ত্রাণ ও উদ্ধার কার্য সুশৃঙ্খলভাবে চলছে। দুর্গত মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরানো হচ্ছে, অস্থায়ী ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় খাবার ও ওষুধ পাঠানো হয়েছে।শিলিগুড়ি ও পোড়াঝাড় এলাকার মধ্যে মহানন্দা নদীর বাঁধ ভেঙে গ্রামাঞ্চলে জল ঢুকে পড়েছে। ঘরবাড়ি, ফসলের জমি, এমনকি স্কুল ও হাসপাতাল পর্যন্ত প্লাবিত।

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানান, রাতের দিকে হঠাৎ নদীর জল বাড়তে শুরু করে। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘরবাড়ি ভেসে যায়। অনেকে গাছে উঠে বা ছাদে আশ্রয় নিয়ে রাত কাটিয়েছেন।

পাহাড়ি অঞ্চলে মিরিক, কালিম্পং ও দার্জিলিংয়ের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক ধস নেমেছে। লৌহসেতু ও জাতীয় সড়কের একাধিক অংশ ধসে পড়েছে, ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে। এনএইচ-১০ ও এনএইচ-৭১৭এ-এর বেশ কয়েকটি অংশে যাতায়াত বন্ধ। তিস্তা বাজার, রাবিজোরা, রঙপো—এই সব এলাকায় সড়ক সম্পূর্ণভাবে নদীজলে তলিয়ে গেছে।

অন্যদিকে, ডুয়ার্স ও কোচবিহার জেলার সমতল অংশেও বিপর্যয় কম নয়। তীব্র বর্ষণে নদীর জল উপচে পড়ে বাড়িঘর, বাজার, বিদ্যালয় ডুবে গেছে। কোচবিহার শহরের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে জল ঢুকে মানুষ কার্যত গৃহবন্দি।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাতে নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় মুহূর্তের মধ্যে জল ঢুকে পড়ে। অনেকে প্রাণ হাতে নিয়ে পালিয়েছেন, কেউ কেউ এখনো নিখোঁজ।

আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি ও পার্বত্য অঞ্চলে আরও ভারী থেকে অতি ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সেই কারণে প্রশাসনকে বাড়তি সতর্কতা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই প্রতিটি জেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে এবং রাজ্য সরকারের তরফে নিয়মিত আপডেট দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রের কাছ থেকেও সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

দুর্যোগ মোকাবিলার অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্য, আহত ও মৃতদের সঠিক তালিকা প্রস্তুত করা এবং দুর্গত মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া। রাজ্য প্রশাসন জানিয়েছে, উদ্ধারকাজ স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসন এবং বিশেষজ্ঞরা মানুষকে পাহাড়ি ঢাল, নদীর তীর ও জলবহুল অঞ্চলে অযথা যাতায়াত না করার পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ, মাটি এখনো সম্পূর্ণ ভিজে থাকায় ধস বা ভাঙনের ঝুঁকি রয়ে গেছে।

উত্তরবঙ্গের মানুষ এখন এক অভূতপূর্ব প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে। তবে প্রশাসন ও উদ্ধারকারী বাহিনী দিনরাত কাজ করে চলেছে, যেন আর কোনও প্রাণহানি না ঘটে—এই আশাতেই তাকিয়ে আছেন সবাই।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।