মঙ্গলবার, ২৫শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ব্যাকডেটে ১১২২ কোটির প্রকল্প অনুমোদনে ৫% ঘুষের ক্যাশিয়ার সহকারী প্রকৌশলী রাজু।। আউটসোর্সিং নিয়োগের মাস্টারমাইন্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক
অক্টোবর ২৭, ২০২৫ ৮:১৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

পিআরএল যাওয়ার আগে ব্যাকডেটে ফাইল সই করে ১১২২ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়ে ৫% ঘুষ নেওয়া ক্যাশিয়ার ছিলেন মঞ্জুর আলীর আপন ছোট ভাই সহকারী প্রকৌশলী রাজু আহমেদ। বর্তমানে এলজিইডি প্রধান ভবনে কর্মরত আছেন। শুধু ঘুষ নয় ২৭০ জন জনবল আউটসোর্সিং এ নিয়োগ দিয়ে ৩ লাখ অনূর্ধ্ব পাঁচ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মঞ্জুর আলী। তবে এই ঘুষের টাকার ক্যাশিয়ার ছিলেন একই ব্যক্তি প্রকৌশলী রাজু আহমেদ। এ টাকার বড় অংশ মঞ্জুর পকেটে ঢুকেছে। মঞ্জুর অবসরে গেলেও তার দুর্নীতির গল্প এখন আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও মঞ্জুর আলীর আত্মীয়-স্বজনকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে এলজিডিতে ঢুকিয়েছেন। মনজুর আলীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে দুদক অভিযোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন একাধিক ভুক্তভোগী। মনজুর আলীর দুর্নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করে বহাল তবিয়তে আছে তার আপন ছোট ভাই সহকারী প্রকৌশলী রাজু আহমেদ। রাজুর বিরুদ্ধেও দুদকে অভিযোগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।রাজু আহমেদ এর দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরার উপযুক্ত সময়।রাজুর দুর্নীতির আদ্যোপান্ত থাকছে পরের সংখ্যায়।

৫% ঘুষ নিয়ে ১১২২ কোটি টাকা বরাদ্দের অভিযোগ: RUTDP’র সদ্য সাবেক প্রকল্প পরিচালক মোঃ মঞ্জুর আলী। গত ১১ অক্টোবর তার পি আর এল যাওয়ার দিন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর পদোন্নতি পান,বিদায়ের দিনে তিনি ছিলেন তৃতীয় গ্রেড। গ্রেড পাওয়ার তদবিরে গত ১১ অক্টোবর রাত পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ে থাকার কারণে আনুষ্ঠানিক বিদায়ী সংবর্ধনাও নিতে পারেননি।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, আর ইউ পিডি পি’র সদ্যসাবেক প্রকল্প পরিচালক মঞ্জুর আলী গত ১৪ ও ১৫ অক্টোবর রাত ন’টা পর্যন্ত এলজিইডির প্রধান ভবনের চার তলায় সেমিনার হলের নির্জনে বসে ব্যাকডেটে বহু ফাইল স্বাক্ষর করেন। সূত্রটি আরো জানায়, তিনি পি আর এল যাওয়ার আগে ৬৯ পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনে ১১২২ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ দিয়েছেন এবং ওই বরাদ্দের অনুকুলে ৫% হারে ঘুষ নিয়েছেন। বরাদ্দ পাওয়া অনেক পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন টেন্ডার করেছেন কোন কোনটি টেন্ডার অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে প্রায়২০টি টেন্ডারের ইভ্যালুয়েশন চলছে।

নোয়া দেওয়া হয়েছে প্রায় ২৫ টি টেন্ডার।

বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভায় বরাদ্দের ক্ষেত্রেও ব্যাপক গড়মিল লক্ষ্য করা গেছে। মঞ্জুর আলীর নিজ জেলা দিনাজপুর সদর পৌরসভায় বরাদ্দ দিয়েছেন প্রায় ৫৮ কোটি টাকা এই লটের সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিনাজপুর সদর পৌরসভায়। বগুড়া সদর পৌরসভায় বরাদ্দ দিয়েছেন ৫২ কোটি টাকা। একটি ছোট্ট পৌরসভা নরসিংদী জেলার মাধবদী পৌরসভায় বরাদ্দ দিয়েছেন প্রায় ৪৬ কোটি টাকা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা বলেন, বছর তিনেক আগে এমজিএসপি’র ডিপিডি থাকাকালীন সময় মঞ্জুর আলী মাধবদী পৌরসভার মেয়রের কাছথেকে তিন কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন বড় একটি বরাদ্দ দেবেন বলে কিন্তু তৎকালীন পিডি তাতে রাজি নাথাকায় সম্ভব হয়ে উঠেনি ।বিষয়টি নিয়ে অনেক দেন দরবার ও হয়েছে। RUTDP অনুমোদনের পর মঞ্জুর আলী মাধবদী পৌরসভায় ছপ্পর ভরে ৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেন। সূত্র আরও জানায়, নিয়োগের তোয়াক্কা না করে এক বছরের বরাদ্দ একবারে দিয়েছেন এবং মোটা অংকের বরাদ্দের পিছনে রয়েছে মোটা অংকের ঘুষ বাণিজ্য। মঞ্জুর আলী খুবই দেশপ্রেমিক ও রাজনীতিপ্রেমিক এর প্রমান দিয়েছেন নিজ জেলার সব পৌরসভায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিয়ে। বিদায় বেলায় তার জন্মস্থান বিরল পৌরসভায় বরাদ্দ দিয়েছেন সাড়ে ১১ কোটি টাকা,বিরগঞ্জ পৌরসভায় সাড়ে ৭ কোটি ও বিরামপুর পৌরসভায় প্রায় সাড়ে১২ কোটি টাকা। বিএনপির প্রতি ভালোবাসার স্বাক্ষর রেখেছেন বগুড়া সদর পৌরসভায় ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে। সূত্র জানায় চট্টগ্রামের জনৈক ঠিকাদারের সাথে রয়েছে তার লেন দেনের দহরম মহরম সম্পর্ক সে কারণে এবং ভাল পার্সেন্টেন্স নিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের বেশির ভাগ পৌরসভায় বরাদ্দের পরিমাণ অনেক বেশি দিয়েছেন। যেমন মিরেশ্বরাই পৌরসভায় পৌনে ২০ কোটি, পটিয়ায় সাড়ে ১৬ কোটি,নোয়াখালী সদর সাড়ে ২১ কোটি, সাতকানিয়া সাড়ে ৮ কোটি, চকোরিয়ায় ১১ কোটি ৩০ লাখ, কক্সবাজার পৌরসভায় সাড়ে ২৯ কোটি,ফেনী প্রায় ২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, প্রকল্পের অধীন ৮১ টি পৌরসভা ও ৬ টি সিটি কর্পোরেশন এর মধ্যে যাদের সাথে দরদাম ফয়সালা হয় সেই ৬৯ টি পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনে বরাদ্দ দিয়েছেন বাকি ১৮ টি পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন পিডির প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বরাদ্দ পায়নি তারা। সূত্র আরো জানায় উত্তর বঙ্গের সকল পৌরসভায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিয়েছেন তিনি।

৫ আগস্ট ২৪ এলজিইডির ঘটনার প্রেক্ষাপট ও‌ বদলি বানিজ্য : ৫ আগস্ট ২০২৪ যেটা ৩৬ অগাস্ট নামে খ্যাত। ৫ অগাস্ট পরবর্তী প্রায় এক সপ্তাহ এলজিইডি ভবন ছিল উত্তাল আওয়ামী লীগ বিশ্বাসী প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আলী আক্তার হোসেনসহ অন্যান্যরা অফিসে আসা বন্ধ করে। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায় মঞ্জুর আলী এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বি এন পি মনা তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেনীর কিছু কর্মচারীদের হাত করে তাদের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের কর্মকর্তাদের টার্গেট করে। তাদের লেলিয়ে দিয়ে পরে মঞ্জুর আলী তার ২/১ জন বন্ধুসহ সেখানে হাজির হয়ে মিচ্যুয়াল করে বিনিময়ে মোটা অংকের টাকা নেয় ,কিছু টাকা আন্দোলন নারীদের দিয়ে বাকি টাকা তিনি নিতেন। ওইসব দল ভুক্ত একাধিক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রথমে আলী আক্তারকে ভয়-ভিতি দেখিয়ে অফিসে আসতে নিষেধ করে। কয়েকদিন পর আলী আক্তারকে অভয় দিয়ে অফিসে আসার সুযোগ করে দেয় এবং বিনিময়ে একচেটিয়া বদলি বানিজ্য নিয়ন্ত্রনে নেন মঞ্জুর আলী। তার এক নিকট আত্মীয় ও কয়েক জন অনুগতদের দিয়ে বদলি বানিজ্য শুরু করেন সমস্ত দেশের এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলীর দফতরে কর্মরত উপজেলা প্রকৌশলী, সহকারী উপজেলা প্রকৌশলী, সহকারী প্রকৌশলী,সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী,হিসাব রক্ষকসহ বিভিন্ন পদের কয়েক’শ বদলি করান এবং পদ বিশেষ পাঁচ লাখ থেকে বিশ লাখ হারে ঘুষ নিতেন। এই ধারাবাহিকতা চলে প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আব্দুর রশীদ মিয়ার সময় পর্যন্ত। সূত্র জানায় জনৈক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর উপর মঞ্জুর আলীর চরম ক্ষোভ ছিল। ক্ষোভের কারণ হিসাবে জানা যায়, আর্থিক বিষয় মনোমালিন্য। এর বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তার ইন্ধনে কয়েকজন কর্মচারী ঐ কর্মকর্তাকে লাঞ্চিত করা হয়েছিল।সূত্র জানায় দিনাজপুর ও এর আশপাশের পৌরসভায় কনসালটেন্ট ও আউটসোর্সিং খাতের জনবলের সিংহভাগ তার আত্মীয়স্বজনকে নিয়োগ দিয়েছেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে মঞ্জুর আলীর ছোট ভাই প্মরকৌশলী রাজুর বন্তব্য জানতে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। হোয়াটসঅ্যাপে খুদেবার্তা পাঠানো হলেও কোনো জবাব মেলেনি।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।