সাম্প্রতিক প্রচুর মৌসুমি ফল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। বছরের এই সময়টায় কাঁচাবাজারে স্টলে স্টলে দেখা যাচ্ছে মৌসুমি ফলের পসরা সাজানো। এ ফলের মধ্যে গাঢ় সবুজ আমড়া অতি গুরুত্বপূর্ণ। টক-মিষ্টি স্বাদের এই ফলটি অনেকের কাছেই প্রিয়, বিশেষ করে আচার বা চাটনি হিসেবে বেশ সুস্বাদু।
তবে আমড়া শুধু স্বাদে নয়, এটি পুষ্টিগুণেও ভরপুর। কারণ আমড়ায় আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ক্যালসিয়াম ও ফাইবার, যা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা থেকে শুরু করে ত্বক, হজম ও হাড়ের যত্নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আমড়া সাধারণত কাঁচা বা পাকা—দুভাবেই খাওয়া যায়। টুকরো করে সালাদ, চাটনি, স্মুদি কিংবা সরাসরি লবণ-মরিচ ছিটিয়ে খাওয়া যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত ঝাল বা নোনতা আচার হিসেবে না খাওয়াই ভালো। এতে পুষ্টিগুণ কিছুটা নষ্ট হয়। তবে আমড়ায় টক উপাদান বেশি থাকায় গ্যাস্ট্রিক কিংবা আলসার রোগীকে পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। বিশেষ করে খালি পেটে না খাওয়াই ভালো।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, মৌসুমি ফল আমড়ার পুষ্টিগুণ আমড়া রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আমড়ায় রয়েছে ভিটামিন সি, যা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সামান্য পরিমাণ আমড়া খেলে সর্দি-কাশি কিংবা মৌসুমি সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে। ইন্ডিয়ান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল বায়োকেমিস্ট্রিতে প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, ভিটামিন সি শরীরে অ্যান্টিবডি উৎপাদন বাড়ায় এবং সংক্রমণ থেকে কোষকে রক্ষা করে।
হাড় ও দাঁত মজবুত করে আমড়া। এতে পাওয়া যায় ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস, যা হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত রাখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুর জন্য এটি ভীষণ উপকারী। জার্নাল অব ফুড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির তথ্যমতে, নিয়মিত আমড়া খেলে শরীরের ক্যালসিয়াম শোষণ বাড়ে এবং হাড় ক্ষয় প্রতিরোধ করে।
এ আমড়া ত্বক ও চুলের যত্নে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। কারণ আমড়ায় থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি ত্বকের কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে, যা ত্বককে টান টান রাখে এবং বার্ধক্য বিলম্বিত করে। নিয়মিত আমড়া খেলে ত্বক উজ্জ্বল হয়, চুলও মজবুত হয়। এ বিষয়ে জার্নাল অব ডার্মাটোলজিক্যাল সায়েন্সেসের গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন সি’সমৃদ্ধ ফল ত্বকের কোষ পুনর্গঠন ও ক্ষত সারাতে সাহায্য করে।
আবার আমড়া ডায়াবেটিস ও ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আমড়ার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম, অর্থাৎ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ায় না। এতে থাকা পলিফেনল উপাদান রক্তে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়, যা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য উপকারী। পাশাপাশি এতে ক্যালোরি কম থাকায় এটি ওজন নিয়ন্ত্রণেও করে থাকে।
এ ছাড়া আমড়া হজমশক্তি উন্নত করে থাকে। আমড়ায় আছে প্রাকৃতিক ফাইবার, যা হজম প্রক্রিয়া সহজ করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে। এর অল্প অ্যাসিডিক স্বাদ পাচকরস নিঃসরণ বাড়ায়। ফলে খাবার হজমে সুবিধা হয়। আয়ুর্বেদ চিকিৎসাতেও আমড়াকে হজম শক্তিবর্ধক ফল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
