বৃহস্পতিবার, ৯ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

গণপূর্তের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ইএম) আশরাফুল এর পদোন্নতি মিশনে টাকা ছড়িয়ে দাম্ভিকতা 

অনলাইন ডেস্ক
অক্টোবর ২, ২০২৫ ৭:৪৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের গণপূর্ত অধিদপ্তর একটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা সরকারের একটি বিশ্বস্ত কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান। সরকারের এই দপ্তরটি ঘিরে বছরের পর বছর ধরে ঘুষ, দুর্নীতি, টেন্ডার কমিশন কারসাজি, ও পদোন্নতি বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগের ভিত্তিতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপরাধীরা শাস্তি ভোগ না করে উল্টো পুরুষ্কৃত করার অভিযোগ উঠেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সব চেয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন গণপূর্তের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ইএম) আশরাফুল হক। অভিযোগ রয়েছে, তিনি কেবল নিজের পদোন্নতি নয়, বরং একদল প্রকৌশলীকে অবৈধভাবে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য কোটি কোটি টাকার কারসাজির খেলায় নেমেছেন।

এই প্রতিবেদনে তাঁর পদোন্নতি মিশন, ঘুষের চক্র, বৈদেশিক সম্পদ সঞ্চয়, রাজনৈতিক আশ্রয় এবং সহকর্মীদের চোখে তাঁর অবস্থান—সবকিছু খতিয়ে দেখা হয়েছে।

আশরাফুল হক বর্তমানে গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ইএম) পদে রয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, তিনি সম্প্রতি সুপারিনটেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার পদে একসাথে ১১ জন প্রকৌশলীকে পদোন্নতি পাইয়ে দেওয়ার জন্য লবিং শুরু করেন। অথচ তাদের অনেকেই সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হননি, যা আইনগতভাবে পঞ্চম গ্রেডের উপরে পদোন্নতির জন্য বাধ্যতামূলক।যিনি যত বড় অঙ্ক দিয়েছেন, তিনি তত দ্রুত সুপারিনটেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার লাইনে।” এমন অভিযোগ প্রমাণ করে যে, গণপূর্তের পদোন্নতি প্রক্রিয়া এখন ‘টাকার বিনিময়ে রূপান্তরিত বাজার’ এ পরিণত হয়েছে।

অভিযোগ আছে, আশরাফুল হক প্রতি টেন্ডারে ঠিকাদারদের কাছ থেকে ২% কমিশন বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ করেন। শুধু তাই নয়, টেন্ডারের ফাইল প্রক্রিয়ায় ইচ্ছাকৃত ভুল ধরে আরও ৫% পর্যন্ত ঘুষ আদায় করা হয়।

একজন ঠিকাদার বলেন- “তিনি টেন্ডারে এমনভাবে টেকনিক্যাল ভুল বের করেন যে, আমাদের হাতে একটাই পথ থাকে—টাকা দেওয়া। টাকা দিলে সব সমস্যা মিটে যায়, না দিলে কাজ বাতিল।” এভাবে কোটি কোটি টাকার সরকারি প্রকল্পের অর্থের বড় অংশ ব্যক্তিগত পকেটে চলে যাচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, আশরাফুল হক ইতোমধ্যে দুই ছেলেকে কানাডায় পাঠিয়ে দিয়েছেন উচ্চশিক্ষার নামে। নিয়মিতভাবে ডলার পাচার করে সেখানে সম্পদ গড়ে তোলার তথ্যও আলোচনায় এসেছে।

দফতরের এক সহকর্মী দাবি করেন- “তিনি মাসে কয়েকবার হুন্ডির মাধ্যমে ডলার পাঠান। ঢাকায় তার একাধিক ফ্ল্যাট ও জমি আছে। সবই টেন্ডার ও ঘুষ থেকে সংগৃহীত।”

এই তথ্যগুলো তার বিরুদ্ধে অর্থপাচার আইনে তদন্তের দাবি তুলছে।

আশরাফুল হক নিজের অবস্থান শক্ত করতে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া নেয়ার ক্ষেত্রেও কৌশলী। জানা গেছে, শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধির বৈদ্যুতিক কাজের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে তিনি সক্রিয় ভূমিকা নেন, যাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।

তবে অনেকেই মনে করেন, তার এই পদক্ষেপ মূলত নিজের পদোন্নতি ও অবৈধ কর্মকাণ্ড আড়াল করার কৌশল।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের ভেতরে আশরাফুল হককে নিয়ে প্রবল অসন্তোষ রয়েছে। সহকর্মীরা তাকে বিদ্রূপ করে বলেন- “লোকটা যেমন বাইরে কালো, ভেতরটাও তেমনি কালো।”

সূত্র মতে, তিনি প্রতিটি প্রার্থী থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ গ্রহণ করে চিফ ইঞ্জিনিয়ারের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। এ নিয়োগপদোন্নতি বাণিজ্যের পেছনে তাঁর প্রত্যক্ষ হাত থাকার অভিযোগে গণপূর্ত ভবনে তীব্র অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে পদোন্নতি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। নির্দিষ্ট যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, সিনিয়রিটি ও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই উচ্চ পদে উন্নীত হওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু আশরাফুল হক নাকি সেই নিয়ম পাশ কাটিয়ে অর্থের বিনিময়ে “তড়িঘড়ি পদোন্নতির” পথ খুলে দিয়েছেন।

একজন প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন- “সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার কোনো রেকর্ড ছাড়াই লোকজনকে পদোন্নতির চেষ্টা চলছে। সবই যেন টাকার খেলা। এ খেলায় আশরাফুল বিজয়ী হলে যোগ্যতাকে গলা টিপে হত্যা করা হবে। আশরাফুল এখন শুধু ঘুমিয়ে নয় দিনের আলোয় ও দেখছেন টাকার স্বপ্ন। এই মন্তব্যই প্রমাণ করে যে, তার ঘুষ,দুর্নীতি কেবল বাইরের অভিযোগ নয়, ভেতরের কর্মীদেরও নীরব কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে।

পাবলিক সার্ভিস রুল অনুযায়ী, সিনিয়র স্কেল পরীক্ষা ছাড়া সুপারিনটেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার পদে উন্নীত হওয়ার সুযোগ নেই। যদি আশরাফুল হকের পদোন্নতিুচেষ্টা সত্যি হয়, তবে তা সরাসরি সরকারি কর্মচারী আইন ও দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ভঙ্গের শামিল।

আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট একরামুল কবির বলেন-“এ ধরনের পদোন্নতি বাণিজ্য সরকারি প্রশাসনের নৈতিকতা ধ্বংস করছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের উচিত অবিলম্বে তদন্ত শুরু করা।”

অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো উঠেছে—তা শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং সমগ্র গণপূর্ত অধিদপ্তরের ভাবমূর্তিকে কলঙ্কিত করছে। পদোন্নতি বাণিজ্য, ঘুষ, দুর্নীতি, অর্থপাচার ও রাজনৈতিক আশ্রয়ের জটিল জালে তিনি আজ “গভীর জলের মাছ” হয়ে উঠেছেন।

এসব বিষয় আশরাফুল হক এর বক্তব্য জানতে চেয়ে তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোনকল গ্রহণ করেননি।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
বিশেষ খবর সর্বশেষ