“চট্টগ্রাম পিআইডির উদ্যোগ”
চাঁদপুরে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভা
তারুন্যের অগ্রযাত্রায় আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল ৭ অক্টোবর চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়েছে ।
পিআইডি চট্টগ্রামের উপপ্রধান তথ্য অফিসার মোঃ সাঈদ হাসানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আব্দুর রকিব পিপিএম, সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ নূর আলম দীন, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ গোলাম জাকারিয়া, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. এরশাদ উদ্দিন, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি রহিম বাদশা।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম পিআইডির সিনিয়র তথ্য অফিসার বাপ্পী চক্রবর্তী।
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধে বলা হয়,গণমাধ্যম হচ্ছে সমাজের চতুর্থ স্তম্ভ, আর সাংবাদিকগণ হলেন সমাজের বিবেক। সমাজের না বলা কথা, পিছিয়ে পড়া মানুষের দুঃখ দুর্দশার কথা, তাদের হতাশা আর বঞ্চনার কথা গণমাধ্যম সমাজের উঁচু শ্রেণির নিকট পৌঁছে দেয়। শোষিত সমাজের অধিকার আদায়ে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন গণমাধ্যম। তাই গণমাধ্যমকে পথ হারালে চলবে না। সবসময় সমাজের মানুষের পাশে থাকতে হবে, তাদের সহযোগিতা দিতে হবে। এ সহযোগিতা দিতে গিয়ে অনেক সময় গণমাধ্যম কর্মীগণ বিরুপ পরিস্থিরি শিকার হতে পারেন, যথাযথ সহযোগিতা নাও পেতে পারেন। তারপরেও গণমাধ্যমকে ঝিমিয়ে পড়লে চলবে না, সবসময় প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হয়ে সমাজের দর্পণ হিসেবে নিজ দায়িত্বে অবিচল থাকতে হবে।
তাঁর বক্তব্যে আরও বলা বলেন ,বর্তমান সময়ে গুজব ও মিথ্যা নিউজ বা ফেইক নিউজ সমাজে অনেক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গুজবের কারণে সমাজের অনেকে বিভ্রান্ত হন, না জেনে শুনে কোন বিষয় বিশ্বাস করে থাকেন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শেয়ার করেন। এতে করে সমাজের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, মানুষ আতংকে ভুগতে থাকে।
তাই গুজবের বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের আরো সচেতন থাকতে হবে। কোন সংবাদকে গুজব বা মিথ্যা সংবাদ বলে সন্দেহ হলে তা যথাযথভাবে যাচাই বাছাই করে গণমাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে।
সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় বিশেষ করে তথ্য অধিদফতর গুজব বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে কাজ করছে। কোন গুজব বা ফেইক নিউজ দৃষ্টিগোচর হলে তথ্য অধিদফতরের ‘ফ্যাক্ট চেকিং টিম’ যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে সে বিষয়ে সঠিক তথ্যটি গণমাধ্যমে প্রেরণ করে থাকে। চাঁদপুরের গণমাধ্যম কর্মীগণও গুজব পরিহার করতে চাইলে তথ্য অধিদফতরের সহযোগিতা নিতে পারে। এ সময়
মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন চাঁদপুর প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক কাদের পলাশ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান, সাংবাদিক সালাহ উদ্দিন, মনোয়ার কানন, শরিফুল ইসলাম, রিয়াজ ফেরদৌস, মো. ইলিয়াস, নজরুল ইসলাম, ওয়াদুদ রানা, ফারুক আহমেদ, শাহরিয়ার পলাশ ও জেলা তথ্য অফিসার তপন চন্দ্র বেপারী।
বক্তাগণ সাংবাদিকতার মানোন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া, সাংবাদিকদের ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ, তরুন ও মেধাবীদের সাংবাদিকতায় সম্পৃক্ত করা, সাংবাদিকতায় শৃংখলা ফিরিয়ে আনা, তরুনদের উদ্যোক্তা বানাতে যথাযথ সাপোর্ট দেওয়া, তরুনবান্ধব ব্যবসায় নীতি প্রণয়ন, গণমাধ্যমে তরুণদের সাফল্যের গল্প তুলে ধরা প্রভৃতি বিষয়ের উপর জোর দেন। তারা বলেন, বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় মফস্বল সাংবাদিকদের পিআইডির মাধ্যমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে সাংবাদিকতার মানোন্নয়ন হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, ৭১ এর আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতা অর্জন আর ২৪ এর আন্দোলন হয়েছে সুশাসন প্রতিষ্ঠা আর অধিকার আদায়ের জন্য।
সরকারের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা সবাই সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করছি। কাজের মধ্যে আমাদের ভুল-ত্রুটি হতে পারে। গণমাধ্যমের কাজ হলো ভয়হীনভাবে সেসব ভুল তুলে ধরা, আমাদের খারাপ কাজের সমালোচনা করা। তাহলে সমাজ সঠিক পথে পরিচালিত হবে।
তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যম যদি সঠিক তথ্য যথাযথভাবে তুলে না ধরে তাহলে রাষ্ট্র পিছিয়ে পড়বে। সমাজের অনগ্রসর মানুষদের না বলা কথা অনুক্ত থেকে যাবে। কাজেই গণমাধ্যমকে প্রকৃত সত্য তুলে ধরতে হবে। কেননা তাদের কণ্ঠস্বর অনেক দুর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
সভাপতি তার মূলতবি বক্তৃতায় গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল ভুমিকা পালনের আহবান জানান। এসময় তিনি সাংবাদিকদের কল্যাণে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের কার্যক্রম তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের মেয়াদে নিহত ও আহত সাংবাদিকদের মাঝে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট হতে ৫৪ লক্ষ টাকার বেশি অনুদান বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রবীন ও গুণী সাংবাদিকদেরও জন্য অবসরভাতা ও সাংবাদিকতায় ফেলোশিপ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।