চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে বিজয়া দশমীর আনুষ্ঠানিকতা শেষে দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে হিন্দুদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।
দুপুর ২টা থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে ঢাকঢোল বাজিয়ে জমকালো অনুষ্ঠান শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও বিসর্জন দেখতে সমুদ্রসৈকতে মানুষের ঢল নামে।
চট্টগ্রাম নগরে প্রতিবছরের মতো এবারও বিসর্জনের প্রধান স্থান পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের পাশাপাশি কর্ণফুলী নদীর কালুরঘাট, অভয়মিত্র ঘাট, রাসমণি ঘাটসহ বিভিন্ন এলাকার পুকুরেও দেওয়া হয়েছে বিসর্জন।
বিভিন্ন এলাকার পূজামণ্ডপ থেকে ট্রাকে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে বিসর্জনের জন্য প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয়। বিসর্জন দেখতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজনও সৈকতে ভিড় করেন। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সন্ধ্যার আগেই প্রতিমা বিসর্জন শেষ করা হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নিখিল কুমার নাথ জানান, প্রতিমা বিসর্জনের জন্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে পতেঙ্গায় এসেছেন পূজার্থীরা। এ ছাড়া শহরের অন্য প্রান্তের পূজার্থীরা আউটার রিং রোড হয়ে প্রতিমা নিয়ে পতেঙ্গায় আসেন। যানজটের কথা বিবেচনায় রেখে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, পূজা উদ্যাপন পরিষদের কর্মীদের পাশাপাশি এখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও আছেন। প্রশাসনের পক্ষে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। প্রতিমা নিয়ে আসতে যাতে পূজার্থীদের কোনো সমস্যা না হয়, সে বিষয়ে প্রশাসন সজাগ ছিল।’
চট্টগ্রাম জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট নিতাই প্রসাদ বলেন, সুষ্ঠুভাবে চট্টগ্রামে পূজা হয়েছে। এ বছর কঠোর নিরাপত্তাসহ সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য আমরা সরকার ও প্রশাসনের কাছে কৃতজ্ঞ।
এদিকে চট্টগ্রামে সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তবে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই প্রতিমা নিয়ে বিসর্জনের উদ্দেশ্যে গিয়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। পুলিশের পক্ষ থেকে তাই বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে।
পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মো. সুলতান আহসান উদ্দিন বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। শতাধিক পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও ছিল।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, মহালয়ার দিনে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা সন্তানদের নিয়ে কৈলাসের স্বামীর ঘর থেকে মর্ত্যে গজে চড়ে যাত্রা শুরু করেন। আর বিজয়া দশমীতে দোলায় চড়ে ফিরে যান।
এবছর চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রধান পূজামণ্ডপ জে এম সেন হলসহ ১৬টি থানায় ব্যক্তিগত, ঘটপূজাসহ ২৯২টি পূজামণ্ডপে পূজা উদ্যাপন হচ্ছে।
এছাড়া চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় মোট পূজামন্ডপের সংখ্যা ২ হাজার ২০২টি। এর মধ্যে প্রতিমা পূজামন্ডপের সংখ্যা এক হাজার ৫৮৫টি এবং ঘট পূজার সংখ্যা ৬১৭টি।
বিসর্জনের আগে বিকেলে চসিকের উদ্যোগে বিজয় দশমীর আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিটি মেয়র ডাঃ শাহাদাত হোসেন।
এসময় মঞ্চে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে সাবেক কাউন্সিলর ডাঃ নূরুল আবছার , পতেঙ্গা থানা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সৈকত মহাজন সাজু, সাধারণ সম্পাদক শ্রী সুজন কুমার দাশ, ইপিজেড থানা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্রী উত্তম মহাজন নব, নগর পূজা উদযাপন পরিষদের প্রচার সম্পাদক শ্রী উত্তম কুমার শীল দিপীকা সংঘের সভাপতি এডভোকেট মোহন লাল মহাজন সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।