টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পারার বেদনার পরও লাশ ফেরত নিতে পারছেন না রিকশাচালক বাবা। প্রাইভেট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১ লাখ ৪ হাজার টাকা হাসপাতাল বিল পরিশোধ না করলে বারো বছরের এক শিশুর লাশ হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় হাসপাতালটির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী আচরণ ও “গলাকাটা ব্যবসা”র অভিযোগ উঠেছে।
আজ ১৩ অক্টোবর রাজধানীর সেগুন বাগিচা বারডেম মা ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বারো বছর বয়সী শিশু আপন মারা যায়। আপন গত কয়েকদিন ধরে হাসপাতালটির ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসা নিচ্ছিল। তার বাবা রিকশাচালক ও মা একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। সন্তানের চিকিৎসার জন্য ইতিমধ্যেই তারা তাদের সামান্য উপার্জিত অর্থ ব্যয় করে ফেলেছেন।
কয়েকদিন ধরে সে হাসপাতালটির ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) ভর্তি ছিল। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে ভর্তি করানো হয়, কিন্তু দরিদ্র বাবা-মা চিকিৎসার খরচ বহন করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন।
আপনের বাবা একজন রিকশাচালক এবং মা গার্মেনস কর্মী। সন্তানের চিকিৎসার জন্য ইতোমধ্যেই তারা তাদের জমানো সঞ্চয় শেষ করেছেন, এমনকি ধার-দেনাও করেছেন। কিন্তু মৃত্যুর পরও মুক্তি মিলছে না সন্তানের লাশ । বকেয়া টাকার জন্য নিথর দেহটি পড়ে আছে হিমাগারে। নিয়তির নির্মম পরিহাস। একদিকে সন্তান হারানোর শোক অন্যদিকে বকেয়া টাকার যন্ত্রনা।
শিশুটির মৃত্যুর পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১ লাখ ৪ হাজার টাকার একটি বিল উপস্থাপন করে এবং টাকা পরিশোধ না করলে লাশ হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানান। মৃত শিশুটির বাবা-মা এখন হাসপাতাল করিডোরে বসে কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছেন মানুষের কাছে।
শিশুটির বাবা প্রবোধ কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, “আমার ছেলেটা আর নেই, তবুও আমি লাশটা নিতে পারছি না। ওরা টাকা ছাড়া লাশ দেবে না। আমি রিকশা চালিয়ে ক’দিনে এই টাকা কীভাবে জোগাড় করব?” হাসপাতালের করিডোরে বসে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন শিশুটির মা। তিনি বলেন, “আমার ছেলেকে একবার শেষবারের মতো কোলে নিতে চাই। কিন্তু তারা লাশ দিচ্ছে না, শুধু বিল চাচ্ছে। সন্তান হারানোর কষ্টের কে দেবে সান্ত্বনা।কে সাহায্যের হাত বাড়াবে এমন হতাশা যেন তাড়িত করছে অসহায় পরিবারটিকে।
স্থানীয়রা ও হাসপাতালের অন্যান্য রোগীর স্বজনরা এ বিষয় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন নিষ্ঠুর আচরণের নিন্দা জানিয়েছেন এবং দ্রুত শিশুটির লাশ তার পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়ার দাবি তুলেছেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, পরিবারের কাছে এখনো প্রায় ১ লাখ ৪ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে। বিল পরিশোধ না করা পর্যন্ত লাশ হস্তান্তর করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে হাসপাতাল প্রশাসন।
মানবাধিকার সংগঠন ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে জরুরি ভিত্তিতে হস্তক্ষেপের আবেদন জানানো হয়েছে। তারা বলছেন, দরিদ্র পরিবারের ওপর এমন আচরণ নৈতিক ও মানবিকভাবে অগ্রহণযোগ্য।
আইনজীবীরা বলছেন, মৃতদেহ আটকে রাখা দণ্ডনীয় অপরাধ হতে পারে। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চাইলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।
শিশু আপনের পরিবার এখনো হাসপাতাল প্রাঙ্গণে বসে আছে— সাহায্যের আশায়, আর একটিবার তাদের সন্তানের মুখ দেখার অপেক্ষায়।
