নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) অধ্যাদেশে (টাউন ইমপ্রুভমেন্ট অ্যাক্ট) বড় পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই রাজউক অ্যাক্টের বেশ কিছু বিষয়ে পরবর্তন চেয়ে অনুমোদনের জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে রাজউক। তবে আইন মন্ত্রণালয়ের ইতিবাচক সাড়া মিললে টাউন ইমপ্রুভমেন্ট অ্যাক্ট কার্যকর হবে।
অধ্যাদেশে যেসব পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে এর মধ্যে রয়েছে– বোর্ড সদস্য পাঁচজনের স্থলে সাতজন, কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিয়মিত আন্তঃকর্তৃপক্ষ বদলি এবং রাজউক চাইলে চাকরির বয়স ২৫ বছর হলে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো।
রাজউকের এমন উদ্যোগে সংস্থাটির স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্টকে (ডিআইটি) রাজউকে রূপান্তরের পর থেকেই সংস্থাটিতে নানা বিষয়ে অস্থিরতা রয়েছে। ডিআইটি থাকাকালে সংস্থাটির বোর্ড সভার সদস্য হতেন অভিজ্ঞ ও দক্ষ পেশাজীবীরা। বোর্ডে অনৈতিক কোনো সিদ্ধান্ত নিতে গেলেই সদস্যরা প্রতিবাদ জানাতেন। ফলে সেই সময় বড় ধরনের কোনো দুর্নীতি ও পরিকল্পনাহীন নগরায়ণের অভিযোগ ওঠেনি। ১৯৮৭ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ইচ্ছায় একটি প্লট বরাদ্দের সিদ্ধান্ত তৎকালীন ডিআইটি বোর্ড আটকে দেয়। এতে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ডিআইটি ভেঙে রাজউক করার সিদ্ধান্ত দেন। পেশাজীবীর বদলে রাজউক বোর্ডের সদস্য করা হয় আমলাদের।
যেসব পরিবর্তন
ওয়ান-ইলেভেনের পর দ্বিতীয় দফায় অধ্যাদেশে সংশোধন আসে। অভিযোগ রয়েছে, সেই সময় এক কর্মকর্তাকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে রাজউকে আনতে আন্তঃকর্তৃপক্ষ বদলি প্রথা চালু করা হয়। তবে ‘অতি প্রয়োজনে’ এটা করা যাবে বলে বিধানে উল্লেখ ছিল। এবার অধ্যাদেশ পরিবর্তনে সাধারণ সরকারি কর্মকর্তাদের আদলে আন্তঃবদলির বিধান করা হয়েছে।
রাজউকের বোর্ড সদস্য ড. আলম স্বাধীন কাগজ’কে বলেন, এখানে বড় কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। আগে ইংরেজিতে লেখা ছিল, এখন সেটা বাংলায় করা হয়েছে।
রাজউক চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম বলেন, এটা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত না করা পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে কথা বলা ঠিক হবে না।
এ ব্যাপারে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুর রহমান তরফদার বলেন, রাজউকের কার্যক্রমে যাতে গতি আসে, এ জন্য বদলির নিয়ম করা হচ্ছে। পাশাপাশি ২৫ বছর চাকরির মেয়াদ পূরণ হলেই অবসরে পাঠানোর বিধান করা হচ্ছে।
ডিআইটি পদ্ধতিতে ফিরতে চান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাজউকের স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ, বিভিন্ন পদে প্রেষণে সরকারি কর্মকর্তাকে রাজউকে পাঠানো হয়। বড় বড় অনিয়ম তাদের হাত দিয়েই হয়। তিন-চার বছর রাজউকে চাকরি করে পরে তারা বদলি হয়ে চলে যান। তবে তাদের অনিয়মের দুর্নাম এসে পড়ে রাজউকের স্থায়ী জনবলের ওপর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এই দায় আমরা আর নিতে চাই না। আমরা ডিআইটির আদলে রাজউক বোর্ড চাই।
এর ফলে এক স্থানে তিন বছর পার হলেই তাকে রাজউক থেকে চট্টগ্রাম বা কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে বদলি করা যাবে। একইভাবে অন্য কর্তৃপক্ষ থেকেও রাজউকে আসতে পারবেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বোর্ড সদস্য আগে পাঁচজন থাকলেও এখন তা সাতজন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতদিন সরকারি চাকরির নিয়মের আদলে ৫৯ বছর চাকরি হলে অবসরে যেতেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বাধ্যতামূলক অবসরের নজিরও রাজউকে নেই। এবার অধ্যাদেশে, কারও চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ হলেই তাকে অবসরে পাঠানোর বিধান যুক্ত করা হয়েছে। কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষ বলছে, কেউ অযোগ্য-অদক্ষতার পরিচয় দিয়ে থাকলে তাকে বদলি বা অবসরে পাঠানোর নিয়ম সরকারি চাকরি বিধিমালায়ও আছে।
এ ছাড়া চেয়ারম্যান ও সদস্যদের এতদিন সাধারণ মেয়াদ ছিল তিন বছর। এখন তা পাঁচ বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যুক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, দীর্ঘ মেয়াদে নিয়োগ দেওয়া হলে কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সহজ হয়। দরিদ্র মানুষ যাতে সহজে বাসস্থানের মালিক হতে পারে, সেটার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অতীতে রাজউকের কার্যক্রম-সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে মন্ত্রণালয়ে মতামত নেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল। এটাতে কিছুটা সংশোধনী এনে রাজউকেই নিষ্পত্তির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আগের অধ্যাদেশে ইমারত বলতে পাকা স্থাপনা বোঝানো হতো। এখন যে কোনো অবকাঠামোই ইমারত হিসেবে বিবেচিত হবে।