বৃহস্পতিবার, ৯ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রাজনৈতিক কোন্দল ও অপপ্রচারে বিপাকে চরফ্যাশন উপজেলা প্রশাসন

অনলাইন ডেস্ক
অক্টোবর ৪, ২০২৫ ৩:৫৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ভোলা প্রতিনিধি : ভোলা চরফ্যাশন উপজেলায় রাজনৈতিক কোন্দল ও ব্যক্তিগত স্বার্থের সংঘাতে বিপাকে পড়েছে বিচার বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি মামলার রায় পক্ষে নিতে তদবিরে ব্যর্থ হয়ে একটি চক্র বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়াচ্ছে। এতে ক্ষুণ্ন হচ্ছে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি। এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন চরফ্যাশন আইনজীবী সমিতিও।

পাশাপাশি টিআর-কাবিখা প্রকল্পের কাজ নিয়ে লুটপাটের অভিযোগ তুলে প্রশাসনকে কোনঠাসা করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে । তবে সংশ্লিষ্টরা এলাকায় প্রকল্প পরিদর্শনে গেলে এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছেন সূবিধাভোগীরা। তারা বলছে, বর্তমান ইউএনও’র শক্ত পদক্ষেপে বদলে গেছে উন্নয়ন প্রকল্পের চেহারা।

অন্যদিকে, চরফ্যাশন পৌরসভার জমি দখল নিয়ে নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে। পৌরমার্কেট ট্যাগ লাগিয়ে সরকারি জমি দখলে রাখা পালিয়ে যাওয়া আওয়ামীলীগ এবং একই কায়দায় বর্তমান বিএনপির দখলবাজি বাজার উন্নয়নকে ও পৌরসভার কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্থ করছে। রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থানা মসজিদ সংলগ্ন সোনালী পুকুরের দক্ষিণ পাড় সরকারি জমি দখল করে ১২টি আধাপাকা টিনসেড দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। এই দুই রাজনৈতিক দলের দখলবাজির সুযোগ কাজে লাগাতে তৃতীয় একটি পক্ষ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে ব্যস্ত।

জানা যায়, গত ৫ অগাস্টের আগে আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও পরে সেগুলো বিএনপি নেতাকর্মীরা ক্ষমতা দেখিয়ে যে যার মত করে দখল করে নিয়ে অন্য ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দিয়ে দেয়।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মেসার্স হাওলাদার ট্রেডার্সের মালিক মো. সুমন জানান, গত বৈশাখ মাসে উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব ও ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর রাসেলের কাছ থেকে একটি দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে গুদাম হিসেবে ব্যবহার করছেন।

মেসার্স একতা ট্রেডার্সের মালিক মো. নুরনবী জানান, তিনি স্থানীয় যুবদল নেতা দুলাল আখনের কাছ থেকে বার্ষিক ৪০ হাজার টাকায় একটি দোকান ভাড়া নিয়ে গুদাম হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওই ব্যবসায়ীরা বলছেন, দোকানগুলো বৈধ-অবৈধ এসবের কিছুই আমরা জানি না। আমরা টাকা দিয়ে দোকান ভাড়া নিয়েছি। আমরা তো কোনো দখল করিনি।

স্থানীয় মা ট্রেডার্সের মালিক মো. নুরনবী মিলিটারি জানান, তিনি স্থানীয় মো. জামাল (পান জামাল) ও গিয়াসউদ্দিন হাওলাদারের কাছ থেকে দুইটি দোকান ভাড়া নিয়েছেন। গত বৈশাখ মাসে এ দোকানগুলো বার্ষিক ৪৫ হাজার টাকা হিসেবে ভাড়া নিয়েছেন।

অপরদিকে, চরফ্যাশন উপজেলায় অস্তিত্ব নেই এমন ৭ লাখ টাকার প্রকল্পের নামে জেলা পরিষদের বরাদ্দ নিয়েও বাস্তব চিত্রকে আড়াল করে আত্মসাত করার প্রপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছে। উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি ও মডেল মসজিদ সরকারি প্রতিষ্ঠান। এ দুইটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শিল্পকলা একাডেমি সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এবং মডেল মসজিদটি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের। শিল্পকলা একাডেমির এডহক কমিটি কর্তৃক সাউন্ড সিস্টেম ও বাদ্যযন্ত্র ক্রয় করা হয়েছে, যা জেলা পরিষদ যাচাই বাছাই করে বিল দিয়েছে। শিল্পকলা একাডেমীর এডহক কমিটির সদস্য সচিব গিয়াস উদ্দিন নান্নু বলেন, দির্ঘদিন ধরে চরফ্যাশনের সাংস্কৃতিক অঙ্গন ঝিমিয়ে পড়েছিল। বর্তমান ইউএনও আসার পরে জমজমাটভাবে বৈশাখী মেলা ও বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান উদযাপন করেছি। ইউএনওর উদ্যোগে একটি পরিত্যক্ত ভবনে শিল্পকলা একাডেমির সংস্কারের কাজ চলছে। চরফ্যাশনের সাংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে একটি চক্র উঠে পড়ে লেগেছে।

মডেল মসজিদের খতিব মাওলানা মোঃ সালেহ উদ্দিন জানান, মসজিদের মাদুর কেনার জন্য জেলা পরিষদ থেকে এখনও বরাদ্দ ছাড় দেয়া হয়নি। অন্যদিকে,নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাজার ব্যবসায়ী বলেন, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এক শ্রেণির লোক সরকারি সম্পত্তি দখল করে ফায়দা লুটছে। আর এসব বিষয়ে প্রশাসন ও পৌরসভা পদক্ষেপ নিলেই বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে তাদের চাপে রাখা হচ্ছে।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, এটি নিয়ে আদালতে একটি মামলা ছিল। জমিটি সরকারি খাস সম্পত্তি হওয়ায় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সুপ্রিম কোর্ট এটি চরফ্যাশন পৌরসভাকে তত্ত্বাবধানের জন্য দায়িত্ব দেয়। সম্প্রতি পৌর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে ৪৪ লাখ টাকার একটি প্রকল্প নিয়ে সেখানে কিচেন মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়ে  ই-জিপি টেন্ডার আহ্বান করে। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ৪২ লাখ ৪১ হাজার টাকায় কাজটি লটারীর মাধ্যমে মেসার্স ইব্রাহীম ডাকুয়া এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজটি পায় এবং গত ১৫ জুন কার্যাদেশও দেওয়া হয়। কিন্তু অবৈধ দখলদারদের কারণে এখনো কাজ শুরু করতে পারেনি ওই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।

এ বিষয়ে বাজার ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম আহবায়ক ও মুদি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো: আব্দুস সাত্তার মিঠু বলেন, আমি শতভাগ নিশ্চিত পৌর মার্কেট নামে চরফ্যাশন পৌরসভায় কোন মার্কেট নেই। এই জায়গাটি সরকারী জায়গা আওয়ামী লীগের আমলে জায়গাটি দখলে নিতে কিছু ব্যবসায়ী অবকাঠামো তৈরি করে শেষ করে যেতে পারেনি। ৫ অগাস্টের পরে তারা পালিয়ে যাওয়ার কারণে বিএনপি’র বিভিন্ন নামধারী কিছু নেতাকর্মীরা যে যেভাবে পারছে তালা মেরে দখলে নিয়েছে। তারা ঘরের কিছু অংশ সংস্কার করে অন্যান্য ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দিয়েছে যা গুদাম হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।

এদিকে ঠিকাদার ইব্রাহিম ডাকুয়া বলেন, টেন্ডার দেওয়ার নামে যে লুটপাট এর বিষয়টি এসেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আলমগীর হোসেন মালতিয়া এ কাজটি নিতে চেয়েছিলেন কিন্তু লটারিতে কাজটি আমি পাই, এতে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ভুল তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালানো হয়। পৌর কর্তৃপক্ষ যখনই অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে আমাদেরকে বুঝিয়ে দিবে তখনই আমরা কাজ শুরু করবো।

এ বিষয়ে পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার মো: শামীম আহমেদ বলেন, সোনালি পুকুর পাড়ে পৌরসভার শত কোটি টাকা মূল্যের খাস জমি বিভিন্ন প্রভাবশালী মহল দখল নিয়ে যার যার মত অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে পরিবেশ নষ্ট করতে ছিলো। এ নিয়ে কোর্টে একটি মামলা হয়। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে চরফ্যাশন পৌরসভা কে জমিটি দেখাশোনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট একটি রায় প্রদান করে। সেই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে পৌরসভা অবৈধ দখলদারদের জায়গাটি খালি করে দিতে একাধিক বার নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। উন্নয়নের স্বার্থে ওই স্থানে একটি শহর কিচেন মার্কেট তৈরীর উদ্যোগ নেয় পৌরসভা। সেই অনুযায়ী ২০২৫ সালের জুন মাসে একটি ইজিপি টেন্ডার আহ্বান করা হয়। যা মেসার্স ইব্রাহিম ডাকুয়া এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান লটারিতে এ কাজটি পায়। ১৫ জুন ২০২৫ তারিখে উক্ত প্রতিষ্ঠানটিকে কার্যাদেশ দেওয়া হয় কিন্তু অবৈধ দখলদারদের কারণে কাজটি এখনও শুরু করতে পারেনি।

সোনালী পুকুর পাড়ের মার্কেট সম্পর্কে চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আলমগীর হোসেন মালতীয়া বলেন, আমি পৌরসভার মার্কেট নির্মাণের এ টেন্ডারের কাজ চেয়েছি, এবং পাইনি বলে প্রশাসনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছি এটা সত্য নয়। আমি ইউএনওকে বলেছি পুকুরের দক্ষিণ পাড়ের টেন্ডারকৃত স্থানের স্থাপনা উচ্ছেদ না করে উত্তর পাড়ের স্থাপনা উচ্ছেদ করে কিচেন মার্কেট তৈরী করুন, তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্ত তিনি তা শুনছেন না।

এ বিষয়ে চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর-প্রশাসক রাসনা শারমীন মিথি বলেন, পৌরসভার সোনালী পুকুর পাড়ের উক্ত জমিটি পৌরসভার নামীয় জমি। এ জমিতে অবৈধভাবে মার্কেট নির্মাণ করে তা বাজার সমিতি থেকে দখলের চেষ্টা করা হচ্ছে ৫ আগস্ট ২০২৪ এর আগ থেকে। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য নির্মিত স্থাপনা ভেঙ্গে সেখানে পৌরসভার অর্থায়নে একটি কিচেন মার্কেট নির্মাণ করার লক্ষ্যে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। সরকারের এ খাস জমি পৌরসভার আয়ত্বে রাখার উদ্দেশ্যে এ মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে। এখানে পৌর মার্কেট তৈরি করা না হলে এ জমি বেদখল হয়ে যাবে এবং পৌরসভা রাজস্বখাত থেকে থেকে বঞ্চিত করা হবে।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।