ভূয়া ভাউচার তৈরি করে কোটি টাকার আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক নুর মোহাম্মদ এর বিরুদ্ধে
ব্রাহ্মনবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার রূপসদী বৃন্দাবন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর মুহাম্মদ জমদ্দারের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে অর্থ আত্মসাৎ, শিক্ষকদের পিএফ ফান্ডের টাকা তছরুপ অন্যান্য আর্থিক অনিয়ম ও অসদাচরণের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে ‘শোকজ’ নোটিশ জারি করেছে এবং তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য জেলা প্রশাসক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট অভিযোগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় শিক্ষার্থী অভিভাবক জানিয়েছেন।
আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ প্রধান শিক্ষক নূর মুহাম্মদ জমদ্দারের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ হলো তিনি নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত বেতন ও অন্যান্য ফি’র টাকা যথাযথভাবে ব্যাংকে জমা না করে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার এবং প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন।
৫ অগাস্টের পর বিদ্যালয়ের সার্বিক দুর্নীতি ও সকল সংকট নিরসনে ২০ দফা দাবি জানিয়েছে ছাত্র অভিভাবকসহ স্থানীয়রা। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো,স্কুলের সকল অর্থনৈতিক আয়- ব্যয় ও জমার হিসাব প্রদান,পূর্বের ম্যানেজিং কমিটি বিলুপ্ত করা, প্রধান শিক্ষক ও সাবেক সভাপতির দায়িত্বে থাকাকালীন যত অর্থ লুটপাট করেছেন, তার সঠিক হিসেবের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন, এই প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বিদ্যালয়ের সম্পত্তি থেকে আনুষাঙ্গিক আয়ের হিসাবসহ নানাবিধ দুর্নীতির।
পরর্বতীতে যখন ম্যানেজিক কমিটির সভাপতি রাশেদুল হক দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন এ অনিয়ম গুলো চাউর হয়েছে। ওই সময় জানুয়ারি ২০২০ থেকে জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত ক্যাশ-খাতা ও ব্যাংক স্টেটম্যান্ট যাচাই করে এই আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ নজরে আসেছে বলে দাবি করেছে বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটি।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মতে,তার এই কাজ শিক্ষামন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীতিমালার পরিপন্থী।
এই গুরুতর অভিযোগের ভিত্তিতে বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি রাশেদুল হক স্বাক্ষরিত একটি শোকজ নোটিশ তাকে প্রদান করা হয়। নোটিশে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ব্যাখ্যা লিখিতভাবে প্রদান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে অ্যাডহক কমিটির সভাপতি আরও দাবি করেন, প্রধান শিক্ষক যে তথ্য দিয়েছে তা সন্তোষজনক নয় এবং মূল হিসাব কে পাশ কাটাতে ডুপ্লিকেট অর্থাৎ ভূয়া ক্যাশ বই তৈরি করেছেন যেগুলোতে কোটি টাকার উপরে হিসাব গোপন করা হয়েছে৷
মৌখিকভাবেও যদি তার অপরাধ স্বীকার করতেন তাহলেও আত্মসাৎকৃত অর্থ বিদ্যালয়ের তহবিলে জমা করে দিত তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতাম না।
একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য লিখিতভাবে জেলা প্রশাসকের নিকট যেকোনো সময় আবেদন করবো।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করতে মুঠোফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি বলেন, আমি জরুরি কাজে ব্যস্ত আছি কথা বলতে পারবো না বলে কল কেটে দেয়। পরবর্তীতে আবারো ও যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,আমার কাগজপত্র সবকিছু ঠিক আছে। আপনার সাথে তারা( ম্যানেজিং কমিটির) বসতে চায়।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বলেন, ম্যানেজিং কমিটি সভাপতি ( রাশেদুল হক) এর সাথে কথা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক (নুর মোহাম্মদ) আমাকে কিছু কাগজ দেখিয়েছে। আমরা সবকিছু যাচাই করবো।
সাবেক উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু তৌহিদের নিকট রূপসদী বৃন্দাবন উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক (নুর মোহাম্মদ জমদ্দার) টাকা আত্মসাতের কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, এগুলোর সাথে আমি জড়িত নয়। গত তিন বছর আগে আমি বাঞ্ছারামপুর থেকে চলে এসেছি। আমি ৬ বছর ছিলাম। তার কোন অভিযোগ আমি পাই নি।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম ফারুক জানান, ডাকযোগে আমাকে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অভিযোগ করেছে। কোন দুর্নীতি করার কোন সুযোগ নাই প্রধান শিক্ষকের। ম্যানেজিং কমিটির তদন্ত করবে। আমরা ও তদন্ত করবো। অনিয়ম হলে আমরা বিষয় টা দেখবো।
সাবেক ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ সেলিম মিয়া জানান, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা বিধি সম্মত নয়। আমরা প্রতি মাসে স্কুলের আয়-ব্যয়ের হিসাব করে জমা করেছি। ভূল হওয়ার কোন সুযোগ নাই। বর্তমান ও ম্যানেজিং সভাপতি কে ও তার দায় নিতে হবে।
তৎকালীন ফ্যাসিস উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু তৌহিদ, আওয়ামী লীগের নেতা ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মোঃ মাসুদ রানা, বর্তমান শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম ফারুক ও কয়েকজন ক্ষমতাসীন লোক তাকে এই কাজে সহযোগিতা করেন বলে জানা যায়। চাকরি বাঁচাতে ক্ষমতাসীন কয়েকজন কে মোটা অঙ্কের অবৈধভাবে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ উঠে এসেছে এই প্রতিবেদনে।
