- úপ্রতিবেদক : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানা ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানগুলো চলছে চরম ঝুঁকি নিয়ে। ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এ বাণিজ্যিক ওয়ার্ডের সর্বক্ষেত্রেই যেন উপেক্ষিত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। নজরদারি ও যথাযোগ্য উদ্যোগ না থাকায় প্রতিবছরই এখানে ভয়াবহ একাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে, বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। একই সঙ্গে অপরিকল্পিত নগরায়ণে ক্রমেই বাড়ছে জনদুর্ভোগ।
জানা গেছে, এখানকার অপ্রশস্ত সড়ক, ঘিঞ্জি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ক্রমেই যেন বাড়ছে নানা ঝুঁকি। জরুরি নাগরিক সুযোগ-সুবিধাও নিশ্চিত করা হচ্ছে না, এমনকি পণ্য পরিবহণে নেই সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা।
মূলত এ ওয়ার্ডটি ডিএসসিসি ও রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এবং আবাসিক এলাকা। চকবাজার থানার অন্তর্গত এ ওয়ার্ডে প্রতিদিন হাজারও মানুষ যাতায়াত করে। অথচ নাগরিক সুবিধা বলতে এখানে কিছু নেই বললেই চলে। যানজট, জলাবদ্ধতা, ফুটপাত দখল, অপরিকল্পিত আবাসন, আলোহীন সড়ক, ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট, গ্যাস, পানি সংকট, মশার তীব্র উপদ্রব নিত্যদিনের সঙ্গী এ ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের।
ওয়ার্ড পরিচিতি : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৩ এর অন্তর্ভুক্ত ২৭ নম্বর ওয়ার্ড (সাবেক ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৬৩ নম্বর ওয়ার্ড) চকবাজার থানাধীন। এ ওয়ার্ডটি জাতীয় সংসদের ঢাকা-৭ আসনের অন্তর্ভুক্ত। এ ওয়ার্ডে রয়েছে হোসেনি দালান রোড, অরফানেজ রোড, কমল দাহ রোড, নাজিমুদ্দিন রোড (হোল্ডিং নং ১-১২৪), গির্দা উর্দু রোড, জয়নাগ রোড, বকশীবাজার রোড, বকশীবাজার লেন, আমলা পাড়া সিটি (বুয়েট স্টাফ কোয়ার্টার), তাতখানা লেন, উমেশ দত্ত রোড, নবাব বাগিচা, নূর ফাতাহ লেন ও পলাশী ফায়ার সার্ভিস স্টেশন এলাকা।
সরেজমিন দেখা গেছে, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডজুড়ে নাগরিক দুর্ভোগ যেন সর্বত্র। হোসেনি দালান রোডের অধিকাংশ রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে রেখেছে দোকানপাট। সন্ধ্যার পর অনেক সড়কের বাতি জ্বলে না, ড্রেনেজ ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। রাতে পাগলা কুকুরের আতঙ্কে চলাফেরা কঠিন হয়ে ওঠে। ওয়াসার পানিতে তীব্র দুর্গন্ধ আর গ্যাসসংকট এলাকাবাসীর নিত্য সমস্যা। মশার তীব্র উপদ্রব, অরফানেজ রোডে রাস্তা সংকীর্ণ, খানাখন্দ আর ভাঙাচোরা সড়কে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ। কমলদাহ রোডে অধিকাংশ ভবন রাজউক অনুমোদনহীন, রাস্তার বাতি জ্বলে না, রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা। নাজিমুদ্দিন রোডের জেলখানার ঢাল থেকে চানখাঁর পুল মোড় পর্যন্ত ফুটপাত পুরোপুরি দখল করা হয়েছে। যদিও সড়কে আলো আছে, তবে ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাবে অল্প বৃষ্টিতেই হাঁটুসমান পানি জমে যায়। গির্দা উর্দু রোড চকবাজার ব্যবসায়ীক এলাকা হওয়ায় প্রতিদিনই তীব্র যানজট লেগে থাকে। অবৈধ পার্কিং, আবর্জনার স্তূপ, আলোহীন ও সংকীর্ণ সড়ক পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছে। জয়নাগ রোডে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে, রাস্তায় খানাখন্দ ও ভাঙাচোরা অবস্থা প্রকট, বেশিরভাগ বাতি নষ্ট। বকশীবাজার রোডে সারা দিনই যানজট, কারণ প্রধান সড়ক হওয়ায় বাসগুলো যত্রতত্র থামে। আমলা পাড়া সিটি (বুয়েট স্টাফ কোয়ার্টার) তুলনামূলক সুশৃঙ্খল হলেও এখানেও সড়কের বাতি জ্বলে না ও যানজট লেগে থাকে। নবাব বাগিচা রোডে ভাঙা রাস্তা, খানাখন্দ ও সংকীর্ণ সড়ক চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। পলাশী ফায়ার সার্ভিস স্টেশন এলাকায় ফুটপাত দখল, লেগুনা-অটো-বাসের ভিড় আর অব্যবস্থাপনায় সব সময় যানজট লেগেই থাকে। সন্ধ্যার পর ফাস্টফুড দোকানের কাস্টমারদের গাড়ি পার্কিংয়ে সড়ক প্রায় অচল হয়ে যায়। এ ছাড়া ওয়ার্ডজুড়ে ভাসমান দোকান, ফুটপাত দখল করে রেখেছে, আর অধিকাংশ দোকান রাস্তার ওপর মালামাল রেখে ব্যবসা চালায়,
ফলে পথচারীদের হাঁটার মতো জায়গাই থাকে না। হোসেনি দালান এলাকার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, সন্ধ্যার পর অন্ধকারে চলাচল করতে ভয় লাগে। রাস্তায় পাগলা কুকুরের আতঙ্কে নামা যায় না, আর ওয়াসার পানির তীব্র গন্ধে খাওয়াও প্রায় অসম্ভব। বাতি জ্বলে না, আর ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাবে অল্প বৃষ্টিতেই পানি জমে যায়। প্রতিদিনের এ পরিস্থিতি শিশু ও বৃদ্ধসহ সাধারণ মানুষের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
অরফানেজ রোড ও গির্দা উর্দু রোডের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, ফুটপাত সব দোকানদাররা দখল করে রেখেছে। বাচ্চাদের নিয়ে হাঁটা তো দূরের কথা, একা মানুষও হেঁটে চলতে পারে না। ব্যবসায়ীরা গ্রাহক হারাচ্ছেন, সাধারণ মানুষও প্রতিদিন ভোগান্তিতে পড়ছেন।
বকশীবাজার এলাকার অন্য এক বাসিন্দা বলেন, বাসগুলো যত্রতত্র থেমে যায়। দিনরাত যানজট লেগেই থাকে। নবাব বাগিচা, পলাশী ফায়ার সার্ভিস স্টেশন এলাকা, বকশীবাজার লেন সব জায়গাতেই ভাঙা রাস্তা, খানাখন্দ, সংকীর্ণ সড়ক ও ফুটপাত দখল সমস্যার সৃষ্টি করছে। কেউ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত ফুটপাত দখলমুক্ত করা, ভাঙা রাস্তা মেরামত, ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কার, পর্যাপ্ত সড়কবাতি চালু রাখা এবং অবৈধ পার্কিং বন্ধের ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, গ্যাস সংকট নিরসন ও পাগলা কুকুর নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি।
ডিএসসিসির ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের সচিব শওকত হোসেন যুগান্তরকে বলেন, এসব অভিযোগের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে বিভক্ত। এ বিষয়ে আমি সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাব, যাতে তারা দ্রুত সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল ৩-এর প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান গণমাধ্যম কে জানান, নতুন নিয়ম অনুযায়ী সাংবাদিকদের কোনো বক্তব্য দিতে হলে ঊর্ধ্বতম কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তথ্য বা সরাসরি বক্তব্য দেওয়া যাবে না।তা ছাড়া এ ওয়ার্ডের বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলার জন্য সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ রয়েছে। আপনারা ওই বিভাগগুলোর সঙ্গে সরাসরি অথবা ফোন করে বক্তব্য নিতে পারেন।