পিরোজপুর মঠবাড়িয়া উপজেলার নিজ কন্যা লামিয়া আক্তার মুন্নির (১৫) হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে অনশনে বসেছেন পিতা মোশারফ হোসেন হাওলাদার। খুনের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে এ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন।
গত রোববার ৯ নভেম্বর বেলা ১১টার দিকে মঠবাড়িয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে কাফনের কাপড় জড়িয়ে অত্যন্ত শোকাহত হয়ে অনশনের পথ বেছে নিয়েছে ন।
দুপুর ২টার দিকে মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধি হিসেবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ রাইসুল ইসলাম আইনগত সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে জুস পান করিয়ে মোশারফ হোসেনের অনশন ভাঙান।
এর আগে মোশারফ হোসেন একই দাবিতে গত ৪ নভেম্বর বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করছিলেন। মোশারফ হোসেন মঠবাড়িয়া পৌর শহরের সবুজনগর এলাকার চানমিয়া হাওলাদারের ছেলে।
মোশারফ হোসেন প্রবোধ কণ্ঠে জানান, ২০২৩ সালের ২০ মার্চ ১০ম শ্রেণিতে পড়ুয়া তার মেয়ে লামিয়া আক্তার মুন্নি খুন হয়েছে।
মেয়ে হত্যার বিবরণ হিসেবে তিনি জানান, তার স্ত্রী সাহিদা আক্তার সোনি সুন্দরী হওয়ায় তৎকালীন মঠবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও টিকিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রিপন জমাদ্দার লোলুপ দৃষ্টি দেয়। একপর্যায়ে তার স্ত্রীকে দিয়ে আমাকে ডিভোর্স করিয়ে তার ঘরে এক ধরনের রক্ষিতা হিসেবে রেখে দেয়।
পরবর্তীতে তার স্ত্রী দাউদখালি ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলামের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। এই পরকীয়া বৈধ করতে তার মেয়ে মুন্নিকে শহিদুল মেম্বারের ছেলে হাসানের সঙ্গে কথিত বিয়ে দেয়। মোশারফ হোসেনের দাবি তার মেয়ের কোনো বিয়ে হয়নি। এক সময় সাহিদা আক্তার ও শহিদুল মেম্বার এলাকা থেকে পালিয়েও যায়।
তিনি ধারণা করছেন সাহিদা আক্তার ও শহিদুল মেম্বারের অবৈধ কর্মকাণ্ড তার মেয়ে মুন্নি দেখে ফেলায় নৃশংসভাবে খুন হয় তার মেয়েকে।
সেই সময়ে শহিদুল মেম্বারের বাড়ির লোকজন তার মেয়ের লাশ বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফেলে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে তিনি মেয়ে খুনের বিষয়টি ১৮ ঘণ্টা পর জানতে পেরে মেয়ের লাশ ফ্রিজ থেকে শনাক্ত করেন।
সেখানেও সেই সময় আওয়ামী লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান রিপন জমাদ্দার প্রভাব খাটিয়ে তৎকালীন প্রশাসনের মাধ্যমে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পরিবর্তন করেন।তিনি ক্ষোভের সঙ্গে আরও বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান রিপন, শহিদুল মেম্বার, শহিদুল মেম্বারের ছেলে হাসান ও নিহত মুন্নির মা সাহিদা আক্তার সোনি এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। কিন্তু চেয়ারম্যান রিপন জমাদ্দার নিজেদের রক্ষা করার জন্য সেই সাহিদাকে বাদী বানিয়ে শহিদুল মেম্বারসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে দায়সারা একটি মামলা করেন; যা পরবর্তীতে অর্থের বিনিময় তারা মীমাংসা হয়ে যায়। আমি আদালতে আমার মেয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সবাইকে জড়িয়ে একটি মামলা করি; কিন্তু চেয়ারম্যান রিপন জমাদারের প্রভাবে আমি এলাকায় আসতে পারিনি এবং মামলা পরিচালনাও করতে পারিনি। যে কারণে মামলাটি নষ্ট হয়ে যায়। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই। আমার মামলাটি পুনরায় চালু করে তদন্তসাপেক্ষে দোষীদের শাস্তি চাই। অনশন চলাকালীন মোশারেফ হোসেনের বক্তব্য শুনে অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
মঠবাড়িয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ রাইসুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি সত্যিই হৃদয়বিদারক। আমরা মোশারফ হোসেনের মেয়ের বিচার পেতে সর্বাত্মক আইনি সহযোগিতা করব।
