পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া পৌরসভার প্রাণকেন্দ্রে কলেমা খচিত ক্যালিগ্রাফি চত্বর। ছবি: সমতল মাতৃভূমি
অনিন্দ্য সুন্দর আর দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য শিল্প-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পরিচায়ক। নান্দনিক শিল্পকর্ম মানুষের চিন্তাশীল সৃষ্টিশীলতার বহিঃপ্রকাশ। রাজধানী ঢাকাসহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন ইসলামি স্থাপত্য প্রতিটি অঞ্চলের সৌন্দর্য ও পরিচিতিকে বাড়িয়ে দিয়েছে। তেমনই একটি স্থাপত্য পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলা বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত ১৫ ফুট উঁচু কালেমাখচিত ক্যালিগ্রাফির স্তম্ভ। এটি ‘কালেমা চত্বর’ নামে পরিচিত। যেখানে বড় অক্ষরে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ লেখা আছে। এটি ১৯৯৮ সালে সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর ব্যক্তিগত অনুদানে নির্মিত হয়েছিল। ভাণ্ডারিয়া শহরে এ ধরনের ক্যালিগ্রাফিসংবলিত স্তম্ভ আরও দুটি নির্মাণ করা হয়েছে, যা দর্শনার্থীদের মাঝে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। পৌর শহর থেকে পশ্চিমে কচা নদীসংলগ্ন চরখালী মোড়ে নান্দনিক ‘বিসমিল্লাহ’ চত্বর ও ফুলতলা নামক স্থানে আল্লাহর ৯৯ নামসংবলিত গোলাকার বৃত্তের ‘সুবহানাল্লাহ’ চত্বর রয়েছে।
ভাণ্ডারিয়া পৌর শহরের আরবি ক্যালিগ্রাফিখচিত এই স্তম্ভ শুধু পিরোজপুরবাসীর কাছেই নয়, প্রথিতযশা সাংবাদিক ও রাজনীতিক মরহুম তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার জন্মভূমি ভাণ্ডারিয়ায় ভ্রমণ করতে যাওয়া পর্যটকদের কাছেও জনপ্রিয় ও সমাদৃত। স্থানীয়রা জানান, নানা দিক দিয়ে সমৃদ্ধ ও ঐতিহ্যবাহী এ উপজেলার সঙ্গে সড়কপথে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, পিরোজপুর, বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার যাত্রীদের যোগাযোগ রয়েছে। ফলে এসব অঞ্চলের হাজারো পরিবহণে যাতায়াতকারী যাত্রী ও পর্যটক এসব দৃষ্টিনন্দন ইসলামি শিল্পকর্ম দেখে অভিভূত হন।
জানা যায়, ভাণ্ডারিয়া বাসস্ট্যান্ডের ত্রিমোহনায় ৩১৫ ফুট জায়গাজুড়ে সমলতল রাস্তা থেকে ১৫ ফুট ওপরে সাড়ে ১৭ ফুটের ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ লেখা ‘কালেমা স্তম্ভ’ নির্মাণ করা হয়। মানিক মিয়ার ছোট ছেলে সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর ব্যক্তিগত অনুদানে এটি নির্মিত হয়। ১৯৯৮ সালের ২৪ মে তিনি কালেমা চত্বরটি উদ্বোধন করেন। সে সময় স্তম্ভের চারপাশে লোহার রেলিং আর বাহারি ফুলগাছে ঘেরা ছিল। যা এখনো বিদ্যমান। কেবলামুখী এই ক্যালিগ্রাফি ফুটিয়ে তুলতে ব্যবহার করা হয়েছে আকাশি রঙের টাইলস। প্রায় ২৭ বছর আগে গড়ে তোলা এ স্তম্ভ¢টি দেশে প্রথম ক্যালিগ্রাফি স্থাপনা বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভাণ্ডারিয়া পৌরসভা সূত্র জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তৎকালীন সরকারের বিশেষ বরাদ্দ হিসাবে ২৪ লাখ টাকা এবং ভাণ্ডারিয়া পৌরসভার তহবিল থেকে আরও ১০ লাখ টাকাসহ প্রায় ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে এই স্তম্ভগুলোর সংস্কার ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ বর্তমানে চলমান রয়েছে।
শুরুতে আট লাখ টাকার বেশি ব্যয়ে নির্মিত কালেমা চত্বরটি পরে কয়েক দফা সংস্কার ও পরিবর্ধন করে আরও দৃষ্টিনন্দন করা হয়। বছর চারেক আগে এটি আরও সুন্দর করতে আরবি হরফ ঠিক রেখে ৩৫ ফুট উচ্চতায় ইলেকট্রনিক হরফে তিন দিকেই কালেমা লেখা হয়েছে।
স্তম্ভগুলোর সৌন্দর্যবর্ধনের কাজের বিষয়ে ভাণ্ডারিয়া পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহেনা আক্তার বলেন, এটি মহান আল্লাহতায়ালার নামসংবলিত স্তম্ভ। তাই এ কাজ সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের পৌরসভার পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে।
