নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) আওতাধীন এক হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকায় গড়ে উঠেছে প্রায় ২১ লাখ স্থাপনার অনুমোদিত কোনো নকশা নেই। এর মধ্যে ১৫-১৬ তলা ভবনও রয়েছে। তবে এর ভেতর অনেক স্থাপনা গড়ে উঠেছে জলাশয়, বন্যাপ্রবাহ এলাকা, নালা-কৃষিজমি ভরাট করে। বাস্তবতা বিবেচনায় এসব ভবনকে অপসারণও করতে পারছে না রাজউক। আবার কোনো কঠোর ব্যবস্থাও নিতে পারছে না। সাম্প্রতিক এসব স্থাপনার বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করেছে রাজউক।
এ খসড়া নীতিমালাটিতে নগর উন্নয়ন কমিটির কাছে উপস্থাপনও করা হয়েছে। তারাও কিছু সুপারিশ দিয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, যেসব ভবন বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুসরণ করে ও রাজউকের মাস্টারপ্ল্যানের ব্যত্যয় না ঘটিয়ে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুসরণ করে গড়ে উঠেছে, সেগুলোকে বৈধতা দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে খসড়া নীতিমালার সুপারিশে বিদ্যমান নকশা অনুমোদন ফি তিন থেকে পাঁচ গুণ জরিমানা আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।
গত ১২ মে এ বিষয়ে সর্বশেষ বৈঠক হয়। এ সময় সিদ্ধান্ত হয়, ১৫ মের মধ্যে আর কোনো সুপারিশ থাকলে সেটি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। কমিটির সভাপতি রাজউকের বোর্ড সদস্য (উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ) এ চিঠি পরিকল্পনা শাখায় পাঠিয়েছেন।
নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির সভাপতি হারুন-অর-রশীদ স্বাধীন কাগজ’কে বলেন, নীতিমালায় এ ধরনের ভবনকে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করার কথা আমরা চিন্তা করছি। যেগুলো একেবারেই নির্মাণবিধি অনুসরণ করেনি, সেগুলো ভাঙার প্রস্তাব থাকবে। আবার যেখানে রাস্তাঘাট আছে, ভবনের মান ভালো, সেগুলোকে কিছুটা ছাড় দিয়ে জরিমানা করে বৈধতা দেওয়ার প্রস্তাব রেখছেন।
এবিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, তারা যে অবৈধ ভবনগুলোর বৈধতা দিতে যাচ্ছে, সে ক্ষেত্রে দেখতে হবে ভূমি ব্যবহার আইন মানা হচ্ছে কিনা, সেটব্যাক (পাশের উন্মুক্ত জায়গা) ঠিকমতো আছে কিনা, প্রয়োজানীয় জায়গা ছাড়া আছে কিনা? আর সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, নতুন আইনের সুযোগে অনিরাপদ ভবনগুলো যেন আবার বৈধতা পেয়ে না যায়, রাজউক বাণিজ্য করার সুযোগ না পায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
১৯৯৫ সালে প্রণীত ঢাকা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানে (ডিএমডিপি) বলা হয়েছিল, দোতলা পর্যন্ত বা দুই কাঠার চেয়ে কম আয়তনের যেসব প্লটে আবাসিক স্থাপনা গড়ে উঠেছে, সেগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল থাকা যেতে পারে। এ ধরনের স্থাপনার অনুমোদন নিতে হলে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র নেওয়ারও বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া হয় ডিএমডিপিতে। কিন্তু আগের ড্যাপে বলা হয়েছিল, এ ধরনের স্থাপনাকে বৈধতা দিতে হলে তিন গুণ জরিমানা দিয়ে স্থাপনার মালিক বৈধতা নিতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে ওই স্থাপনার নকশার অনুমোদন নিতে রাজউকে যে ফি দিতে হতো, জরিমানা পরিমাণ হবে ওই ফির তিন গুণ। ২০২২ সালে যে প্রণীত ড্যাপে সেটা করা হয়েছে ১০ গুণ। পাশাপাশি ভবনের সক্ষমতা পরীক্ষার কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু তাতেও অবৈধ নির্মাণ থেমে থাকেনি।
প্রণীত ড্যাপে উল্লেখ আছে, রাজউক এলাকায় ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সময়ে ২০ লাখ ৬০ হাজার ১৬০টি অনুমোদনহীন ভবন তৈরি হয়েছে।
খসড়া নীতিমালায় প্রস্তাব করা হয়েছে, আবাসন প্রকল্পগুলো কেস টু কেস ভিত্তিতে আবেদনের ভিত্তিতে রাজউকের নিয়ম মেনে বৈধতা দেওয়া যেতে পারে। আর ভবনগুলোর ক্ষেত্রে ড্যাপে যে ১০ গুণ জরিমানা আরোপের প্রস্তাব করা আছে, সেটা কমিয়ে পাঁচ গুণ করার পক্ষে বেশি মত এসেছে। অবশ্য কমিটির কয়েকজন জরিমানার মাত্রা তিন গুণের পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে যেগুলো নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে গড়ে উঠেছে, সেটা এর আওতায় পড়বে না।
রাজউকের বোর্ড সদস্য (উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ) হারুন অর রশিদ বলেন,রাজউক বিভিন্ন এলাকায় নকশা না মানা ভবনের বিরুদ্ধে জোরালো অভিযান শুরু হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য অতীতে যা হয়েছে কিন্তু আর একটি ভবন ও যেন নকশা বহির্ভূতভাবে গড়ে না উঠে।