বুধবার, ২৬শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এখন সাইবার স্পেসেও নারীদের নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে: উপদেষ্টা

স্টাফ রিপোর্টার
নভেম্বর ২৬, ২০২৫ ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

অন্তর্বর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, ‘আগে রাস্তাঘাট মেয়েদের জন্য হুমকি ছিল, এখন সাইবার স্পেসেও নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে। প্রযুক্তি উন্নত হলেও আমাদের মনোভাবই এর পথ নির্ধারণ করবে।’

মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক সংলাপে এ কথা বলেন উপদেষ্টা। অনলাইনে নারীদের হয়রানি বন্ধে জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

মঙ্গলবারই মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, নারী উন্নয়ন ও লিঙ্গ সমতার জন্য স্থানীয় পরামর্শদাতা গ্রুপ এবং জাতিসংঘের যৌথ উদ্যোগে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ এ সংলাপ শুরু হয়। সমাজ কল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ প্রতিপক্ষ উদ্বোধন করেন।

পক্ষের এবারের প্রতিপাদ্য— ‘ইউনিট টু অ্যান্ড ডিজিটাল ভায়োলেন্স অল উইমেন অ্যান্ড গার্লস।’ বাংলা প্রতিপাদ্য- ‘নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বন্ধে ঐক্যবদ্ধ হই, ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করি।’

উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, সাইবার জগতে অনিরাপদ নারী হয়রানির শিকার পদে পদে। আগে একটি মেয়ে রাস্তায় বের হলে ইভটিজিংয়ের ভাবনা করত; এখন মেয়েরা সাইবার স্পেসে গেলেই সাইবার বুলিংয়ের মুখোমুখি হচ্ছেন। এ সাইবার বুলিংয়ের জগৎ আরও ব্যাপক হয়েছে। এখন সাইবার স্পেজের মাধ্যমে এটি আর শুধুই কোনো প্রতিবেশীর ছেলে নয়, সারা বিশ্বের যে কেউ আপনার মর্যাদার ওপর হামলা করে চালাতে পারে। প্রযুক্তি তার নিজস্ব গতিতে চলবে, কিন্তু আমরা কীভাবে মনোভাব গড়ে তুলছি সেটাই নির্ধারণ করে দেবে এর দিক। তাই ১৬ ডেজ অব অ্যাক্টিভিজম আমাদের জন্য প্রতিদিনের একটি সম্মিলিত স্মরণিকা বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৫৯ শতাংশ নারী অনলাইনে হয়রানির শিকার হচ্ছে, ভুক্তভোগী ৯০ শতাংশ নারী অভিযোগ করেন। দেশে সাইবার অপরাধ দমনে অনেক ভালো ভালো আইন রয়েছে কিন্তু এসবের প্রয়োগ না থাকায় অপরাধীদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে।

উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা এ সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে উদ্যোগ নিয়েছি। সাইবার সহিংসতা রোধ শুধু কোনো মন্ত্রণালয় বা প্রতিষ্ঠানের একার কাজ নয়।

এটি রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রের কাজ উল্লেখ করে বলেন, মেয়েরা কখনো কোনো নিরাপদ পরিস্থিতি অনুভূত হলে প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপের জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সহযোগিতা নিতে হবে। মন্ত্রণালয়ে কে জানাতে হবে, আমার মন্ত্রণালয়ের কুইক রেসপন্স টিম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভিকটিমের কাছে পৌঁছে যাবে।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ এনডিসি আরও শক্তিশালী আইন, সমন্বিত প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ এবং জনসচেতনতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউছুফ বলেন, ডিজিটাল সহিংসতা একটি বৈশ্বিক বিষয়, যা মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ জরুরি।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে, বিশ্বের ৪০ শতাংশেরও কম দেশে সাইবার হ্যারাসমেন্ট বা সাইবারস্টকিংয়ের বিরুদ্ধে নারীদের সুরক্ষার আইন রয়েছে। ফলে বিশ্বের ৪৪ শতাংশ নারী ও কন্যা— মোট ১.৮ বিলিয়ন মানুষ আইনগত সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত। অনলাইন হয়রানি, সাইবারস্টকিং, ডিপফেক, জেন্ডারড ডিসইনফরমেশনসহ বিভিন্ন ডিজিটাল অপরাধ নারীর অধিকার হুমকির মুখে ফেলছে।অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার সুসান রাইল বলেন, এটি শুধু নারীর সমস্যা নয়, আমাদের সবার সমস্যা। তাই সরকার, সংগঠন এবং নারীরা একসঙ্গে লড়তে হবে। একটি এমন পৃথিবী গড়তে হবে, যেখানে প্রযুক্তি ও সহযোগিতা সবার নিরাপত্তা ও সমতা নিশ্চিত করবে।

সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইক্স বলেন, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকারদের বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগ জরুরি। এটি অপরাধীদেরকেও বার্তা দেয় যে তাদের অপরাধ অমার্জিত থাকবে না। যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ বাস্তবায়ন নারী, কন্যা ও ছেলেদের অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ইউএন উইমেন প্রতিনিধি গীতাঞ্জলি সিংহ বলেন, ডিজিটাল সহিংসতার কোনো সীমানা নেই। বিশ্বে ১৬ থেকে ৫৮ শতাংশ নারী ও কন্যা অনলাইন হয়রানির শিকার। অনলাইন হয়রানি এবং বুলিং প্রায়ই অফলাইনে ছড়িয়ে পড়ে, নারীর কণ্ঠ স্তব্ধ করে এবং জনজীবনে অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত করে। একটি ভিন্ন ভবিষ্যৎ সম্ভব—যেখানে নারী ও কন্যারা সর্বত্র নিরাপদ থাকবে।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।