প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। গতকাল থেকে আবারও লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। এতে পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে সারা দেশের ৬৫ হাজার ৫৬৯টি বিদ্যালয়ে। অন্যদিকে সরকারি মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষকরাও দশম গ্রেড থেকে নবম গ্রেডে বেতন নির্ধারণসহ চার দফা দাবি পূরণ না হলে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে সারা দেশের ৭২১ প্রতিষ্ঠানে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে শিক্ষা ভবনের সামনে বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির ব্যানারে অবস্থান নিয়ে তারা এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
সারা দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ কোটির বেশি শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। গতকাল এসব শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে উপস্থিত হলেও ক্লাস না হওয়ায় অলস সময় পার করে। সারা দিন স্কুলে খেলাধুলা করে বাড়ি ফিরে যায় শিক্ষার্থীরা। সামনে বৃত্তি ও বার্ষিক পরীক্ষা। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকলেও তারা অফিস কক্ষে একত্রিত হয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন। ক্লাস না হওয়ায় স্কুল টাইম শেষে যার যার বাড়ি ফিরে যায় শিক্ষার্থীরা।
বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. শামছুদ্দিন মাসুদ বলেন, নভেম্বরের মধ্যে আমাদের দাবির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের অগ্রগতি দৃশ্যমান না হওয়ার কারণে সম্মিলিতভাবে কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (শাহিন-লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি বলেন, শিক্ষার্থীদের শিখন অবস্থান যাচাই-দ্বিতীয় পর্ব কর্মবিরতির আওতাভুক্ত থাকবে।
বুধবার বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (কাসেম-শাহীন) সভাপতি প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কাসেম, বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. শামছুদ্দিন মাসুদ, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (শাহিন-লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি, শিক্ষক নেতা মু. মাহবুবুর রহমান এবং শিক্ষক নেতা মো. আনোয়ার উল্যার নেতৃত্বে এই কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। আনোয়ার উল্যা বলেন, দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষকদের এই ন্যায্য দাবি পূরণ না করা অমানবিক এবং চরম হতাশার জন্ম দিয়েছে।
শিক্ষক নেতারা জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড জটিলতা নিরসণ ও সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির দাবিতে গত ৮ নভেম্বর থেকে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি ও ঢাকার শাহবাগে কলম সমর্পণ কর্মসূচি পালন ও কর্মসূচিতে পুলিশের অতর্কিত হামলায় শতাধিক শিক্ষক আহত হওয়ার পর প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের নেতাদের সঙ্গে ৯ নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ১০ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে আলোচনা হয়।
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের তিন দফা দাবি হলো—সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল দশম গ্রেডে নির্ধারণ, ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার বিষয়ে জটিলতার অবসান এবং সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি।
দশম গ্রেড থেকে নবম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, দ্রুত স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গঠনসহ চার দাবিতে রাজধানীর আব্দুল গণি রোডে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কার্যালয় শিক্ষা ভবন চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। দাবি বাস্তবায়নে সরকারকে আগামী রবিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন তারা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন সরকারি স্কুল থেকে আসা শিক্ষকরা সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির ব্যানারে শিক্ষা ভবন চত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন । বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহাব উদ্দিন মাহমুদ সালমী বলেন, পদোন্নতি যোগ্য একটি মাত্র পদ থাকায় সহকারী শিক্ষকরা দীর্ঘদিন পদোন্নতি পাচ্ছেন না। বর্তমান বাস্তবতায় দশম গ্রেডে বেতনে শিক্ষকরা হিমশিম খাচ্ছেন। তাই আমরা চাই ‘সহকারী শিক্ষক’ পদটি নবম গ্রেডে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত করে দ্রুত সময়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গঠন করে গ্রেজেট প্রকাশ হোক। এ অধিদপ্তর গঠন করে শিক্ষকদের পদগুলো ক্যাডারভুক্ত করলে আমরা অন্যান্য প্রশাসনিক পদে পদোন্নতির সুযোগ পাব।’
