নিজস্ব প্রতিবেদক : তেজগাঁও গণপূর্ত বিভাগের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী মাশফিক আহমেদের বিরুদ্ধে ঘুষ , দুর্নীতি অনিয়মসহ স্বেচ্ছাচারিতার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে। ঘুষ, অর্থ আত্মসাৎ, প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার, সিন্ডিকেট গঠন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের লুট—সব মিলিয়ে তিনি যেন দুর্নীতির এক জীবন্ত কিংবদন্তী। তিনি সরকারি কর্মচারী হয়ে বিগত সরকারের একজন দাপুটে নেতার মতন আচরণ করে গোটা অধিদপ্তরকে বিতর্কিত করেছেন।
সূত্র বলছে , ক্ষমতার দাপটে কাজী মাশফিক আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে তেজগাঁও গণপূর্ত বিভাগকে নিজের বাণিজ্যিক ঘাঁটিতে পরিণত করেছেন। নিজের পছন্দের ঠিকাদারদের কাছ থেকে কমিশন আদায়ের জন্য তিনি মনগড়া কোটেশনের মাধ্যমে ভুয়া বিল ও ভাউচার তৈরি করেন, যা এখন তার ‘রুটিন প্রক্রিয়া’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। অভিযোগ রয়েছে, কমিশন না দিলে ফাইল গোপন করে ঠিকাদারদের বিল আটকে দেন এবং কখনো কখনো প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন একাধিক ঠিকাদার।
প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্বে থাকলেও, তার আচার-আচরণ ও কর্মকাণ্ডে বারবার শিষ্টাচার লঙ্ঘনের নজির রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ঠিকাদার গণমাধ্যম কে বলছেন, সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে তিনি ‘আমি যা বলি সেটাই আইন’ এতেই স্বেচ্ছাচারিতার প্রমাণ মেলে। ফলে এই বিভাগের পরিবেশ আজ আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তায় পরিপূর্ণ।
এদিকে ঘুষের টাকা আর ভুয়া বিলের অর্থে কাজী মাশফিক গড়ে তুলেছেন নামে-বেনামে অগাধ সম্পদ। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তার নামে অথবা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের নামে একাধিক বাড়ি, জমি ও বিলাসবহুল যানবাহনের তথ্য ইতোমধ্যেই চাউর হয়েছে।
উল্লেখ্য যে , ৫ অগাস্ট সরকার পরিবর্তন হলেও বর্তমান সরকারের আমলে কাজী মাশফিক আহমেদ রয়েছেন বহাল তবিয়তে। নানা মহলের চাপ থাকা সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে এখনও কোনো বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, তদন্ত প্রক্রিয়া স্তব্ধ রাখতে তিনি প্রশাসনের একাধিক স্তরে মোটা অঙ্কের অর্থ ছড়িয়ে ‘ম্যানেজমেন্টে’ ব্যস্ত। জুলাই বিপ্লবে ছাত্র হত্যায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে একাধিক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। ছাত্র হত্যার অভিযোগে রাজধানীর রামপুরা থানার একটি হত্যা মামলার আসামি।এসকল অভিযোগে বাদী সুমন হাওলাদার নামে এক ভূক্তভোগী রাজধানীর রামপুরা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন ওই তিন প্রকৌশলীসহ আরো অনেকের বিরুদ্ধে। মামলা নম্বর ১১৮। উক্ত মামলায় নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল আলম রব্বানীকে -১১৪ , কাজী মাশফিক আহমেদ- ১১৫ ও মোর্শেদ ইকবালকে -১১৬ নম্বর আসামি করা হয়।
এ বিষয়ে রামপুরা থানার ওসি আতাউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ছাত্র আন্দোলনে হত্যার অভিযোগে সুমন হাওলাদার নামে এক ব্যক্তি মামলা করেছেন। শীঘ্রই উক্ত মামলার জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে , বিগত দিনে গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল আলম রব্বানী, কাজী মাশফিক আহমেদ এবং মোর্শেদ ইকবাল যোগসাজশ করে দুর্নীতির আখড়া বানিয়েছিলেন। ওয়ালটন কোম্পানির লিফট একচেটিয়া পিডব্লিউডি সিডিউলে ঢুকানোর জন্য আলাদাভাবে টাকার বিনিময়ে বিপুল অঙ্কের ঘুষ নিয়েছেন। তাছাড়া এ কোম্পানির খরচে আরাম আয়েশের জন্য বিদেশও প্রমোদ ভ্রমণ করেছেন।