খাদ্য প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক ও সরকারি খাদ্য গুদামের (এলএসডি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। সরকারি চাল সংগ্রহ ও বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে। এসব কারণে তাকে ইতোমধ্যে দিনাজপুরের বিরামপুরে বদলি করা হয়েছে। অন্যদিকে দিনাজপুরের সাবেক জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ডিসি-ফুড) সুবিরনাথ চৌধুরীর বিরুদ্ধে উৎকোচ দাবির অভিযোগ উঠেছে। পরিবহণ মালিকদের একজন এ বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। ইতোমধ্যে তাকেও ঝিনাইদহে বদলি করা হয়েছে।
খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে রৌমারীতে যোগদানের পর থেকেই শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। তিনি ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরের যাদুরানী খাদ্য গুদামে দায়িত্ব পালনকালে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। জানা গেছে, শহীদুল্লাহর সোনালী ব্যাংক রৌমারী শাখার হিসাবে এ বছর ২৫ মে থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত প্রায় ৮২ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। এ ছাড়া ময়মনসিংহের সোনালী ব্যাংকের আরেকটি ব্যাংক হিসাবে ১ জুন থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় এক কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।
সরকারি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে নিুমানের চাল বিতরণ করা হচ্ছে। এ বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের অভিযানে প্রমাণিত হয়েছে। ১৮ সেপ্টেম্বর স্থানীয় জনতা সরকারি গুদাম থেকে বের করার সময় দুই ট্রাক নিুমানের চালসহ আটক করে। এ সব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে ফোন করা হলে শহীদউল্লাহ বাব বার ফোন কেটে দেন। একবার ফোন ধরে প্রতিবেদকের পরিচয় দেওয়ার পর তিনি আমি আপনাদের লোক বলেই ফোন রেখে দেন। পরে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।
অন্যদিকে রৌমারি উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক ও এলএসডির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহীদ উল্লাহর বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে নিুমানের চাল সংগ্রহ, সরবরাহকারীদের বিল আত্মসাতের অভিযোগে চালকল মালিক নাসির উদ্দিন লাল মামলা করেছেন। নাসির উদ্দিন বলেছেন, সরকারি তালিকায় শামীম এন্টারপ্রাইজ নামে কোনো চালকল নেই। অথচ শহীদুল্লাহ ওই প্রতিষ্ঠানের নামে সরবরাহ করা ১০ টন চালের বিল দিয়েছেন। এর আগে আমন মৌসুমেও তিনি নাসির উদ্দিনের তিন লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রামের ডিসি ফুড মোহাম্মদ কাজী হামিদুল হক সমতল মাতৃভূমি’কে বলেন, শহীদুল্লাহর বিষয়ে একাধিক অভিযোগ পড়েছে। আমরা বিষয়গুলো তদন্ত করছি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে দিনাজপুরের সাবেক ডিসি-ফুড সুবিরনাথ চৌধুরীর বিরুদ্ধে সোহা অটো রাইস মিলের মালিক সাদেকুল ইসলামের কাছে ১০ শতাংশ ঘুস দাবির অভিযোগ উঠেছে। সাদেকুল প্রতিকার চেয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেছেন।
সুবিরনাথ চৌধুরী সমতল মাতৃভূমি’কে বলেন, আমি কারো বিল আটকে রাখিনি। আমি কারো কাছে ঘুস চাইনি। সাদেকুল খুনের মামলার পলাতক আসামি। সে কারণে তার বিলে স্বাক্ষর করা নিয়ে আমাকে স্থানীয়দের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে। পরে সাদেকুলের ভাইকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়ে পাঠানোর পর আমরা বিল পরিশোধ করেছি।
এসব বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. মাহবুবুর রহমান সমতল মাতৃভূমি’কে বলেন, বিষয়গুলো তদন্ত হচ্ছে। তদন্তের আগে কিছু বলা যাচ্ছে না। কারণ, আমরা এখানে এক ধরনের বিচারিক কাজ করে থাকি। অভিযোগ হলেই কেউ দোষী-নির্দোষ তা বলা যাবে না। তদন্তে যা উঠে আসবে তাই সঠিক বলে ধরে নেব।
