চান্দিনা পৌর ভূমি অফিসের পিয়ন শরীফুল ইসলাম এর ভয়ানক কান্ডে ক্ষোভে ফুঁসছেন চান্দিনাবাসী। প্রতারণা ও দুর্নীতির মাধ্যমে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। জেলা প্রশাসকের জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করে খাল, পুকুর, দিঘি ও ফসলি জমি ভিটিতে রূপান্তরের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এ প্রতারক পিয়ন শরীফুল।
স্থানীয়রা জানান, তার এই দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সার্ভেয়ার, কানোনগো ও এসি ল্যান্ডদের যোগসাজশ ছিল, যার ফলে ১০–১২ বছরের মধ্যে পৌর এলাকার বহু জলাশয় এবং কৃষিজমি ভবনের প্লট হিসেবে বিক্রি হয়েছে।
এরপর সার্ভেয়ার, কানোনগো এসি ল্যান্ডসহ সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে প্রতিটি শ্রেণি পরিবর্তন থেকে ৫-১০ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেন শরীফুল। এভাবেই হয়েছেন বিপুল সম্পদের মালিক। ওই পিয়নের বিরুদ্ধে সমতল মাতৃভূমি ডটকম একাধিক খবর প্রকাশের পর একে একে তার আরও দুর্নীতির তথ্যের আদ্যোপান্ত বেরিয়ে আসতে শুরু হয়েছে। মুখ খুলতে শুরু করেছেন ভুক্তভোগীসহ এলাকার প্রত্যক্ষদর্শীরা।
জানা যায়, একটা সময় কুমিল্লার চান্দিনা পৌরসভায় বহু খাল, পুকুর, ডোবা ও দিঘি ছিল। ছিল ফসলি জমিও। মাত্র ১০-১২ বছরের ব্যবধানে এসব খাল, পুকুর, ডোবা, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ভিটিতে রূপান্তর হয়েছে। জেলা প্রশাসকের অনুমোদন ছাড়া জমির শ্রেণি পরিবর্তন করার বিধান না থাকলেও পৌর ভূমি অফিসের পিয়ন শরীফুল সেই কাজ করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, কোনো কোনো খারিজ নায়েব-এসি ল্যান্ডরা আপত্তি দিলে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে তা আদায় করে নিতেন শরীফুল।
সূত্র জানায়, পৌরসভা এলাকায় বাড়িঘর নির্মাণের জন্য প্ল্যান পাশ করতে হলে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে হয়। অর্থাৎ ভিটি শ্রেণি ছাড়া ইমারতের প্ল্যান মেলে না। গত ৮ বছরে পৌর এলাকায় ভবন নির্মাণের প্ল্যান পাশের ক্ষেত্রে সব প্রকার জমির শ্রেণি পরিবর্তনের কাজের কন্ট্রাক্ট নেন শরীফুল।
জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর জাল করে কমপক্ষে শতাধিক প্লটের শ্রেণি পরিবর্তন করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। যখন যে জেলা প্রশাসক থাকতেন তার স্বাক্ষর জাল করে শ্রেণি পরিবর্তন করতেন। কোনো কোনো সময় জেলা প্রশাসকদের স্বাক্ষর স্ক্যান করে চালিয়ে দিতেন। তৎকালীন সার্ভেয়ার, কানোনগো, এসি ল্যান্ডসহ ভূমি অফিসে কর্মরতরা তাদের আইডি থেকে এসব কাজের অনলাইন ডাটা এন্ট্রি করে দিতেন। এতে শ্রেণি পরিবর্তনের বৈধতা পেত।
সম্প্রতি মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পৌর এলাকার হারং গ্রামের লুৎফা বেগমের নামে একটি খারিজ সম্পাদন করেন শরীফুল। একজন ওয়ারিশ বাদ দিয়ে খারিজটি সম্পাদন করা হয়। এ সময় কিউআর সেন্সরভুক্ত দাখিলাটি জালিয়াতি করা হয়। পরে ওই দাখিলা দিয়ে মূল্যবান জমির রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে সাবরেজিস্ট্রার চেক করে দেখেন দাখিলাটি অনলাইন ডাটা এন্ট্রিতে নেই। পরে একজন ওয়ারিশের অভিযোগের ভিত্তিতে খারিজটি বাতিল করে উপজেলা ভূমি অফিস।
সরেজমিন পৌরসভার সাহাপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, তামান্না জেবিন নামের মালিকানায় থাকা একটি পুকুর ভরাট করে ভবন নির্মাণকাজ চলছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬৯০৪নং মামলায় সাড়ে ১২ শতাংশ পুকুর ভিটিতে রূপান্তর করে খারিজ করা হয়েছে। এখানে জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর জালের মধ্যমে শ্রেণি পরিবর্তন করে ওই জমিকে ভিটিতে রূপান্তর করা হয়েছে। মোটা অঙ্কের উৎকোচে এ কাজ করে দিয়েছেন শরীফুল। একই এলাকার কাজী তৌহিদুলের সাড়ে সাত শতাংশ পুকুর শ্রেণি পরিবর্তন করে ভিটি করা হয়েছে। সেখানেও ভবন নির্মাণকাজ চলছে। পৌর সদরের ১১৯৩নং বিএস খতিয়ানের ২৫০৩নং দাগে ৩৫ শতাংশ একটি পুকুর শ্রেণি পরিবর্তন করে ভিটিতে রূপান্তর করে দেন শরিফুল। প্রায় ২০ কোটি টাকা মূল্যের ওই পুকুর এখন ভিটিতে রূপান্তর হয়ে গেছে। প্লট করে সেখানে হাউজিং প্রকল্পের কাজ চলমান আছে।
পৌরসভা এলাকায় শাহরিয়ার সরকার নামের একটি খারিজে শ্রেণি পরিবর্তন করা হয়েছে। ৩০৩২/২৩-২৪ মোকদ্দমায় ওই শ্রেণি পরিবর্তন করা হয়েছে। মোটা অঙ্কের উৎকোচে ৩ শতাংশ জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন করা হয়।
