সাভারের আশুলিয়ায় গুলাগুলির পর টানা দুই দফা সেনা অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদকদ্রব্যসহ সাতজনকে গ্রেফতার করেছে সেনাবাহিনী। এছাড়া বিকালে আশুলিয়ায় চলচ্চিত্র অভিনেতা মন্টুর বাড়িতে অভিযানে বিদেশি পিস্তল, গুলি ও ইয়াবাসহ আরও দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ।
সেনা সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে আশুলিয়ার গাজীরচট ও কান্দাইল এলাকায় একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী অবৈধ অস্ত্রের মাধ্যমে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে প্রভাব বিস্তার ও মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছিল। বৃহস্পতিবার রাতে গাজীরচট এলাকায় হঠাৎ পাঁচ রাউন্ড গুলির শব্দে পুরো এলাকা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে জামগড়া আর্মি ক্যাম্পের টহল দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের সহায়তায় সন্ত্রাসীদের আস্তানায় অভিযান চালায়।
প্রথম অভিযান: গাজীরচটে গ্রেফতার ৪
অভিযানে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মেহেদী হাসান মিঠুনের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি চক্রের অস্ত্র ও মাদক ভান্ডার উন্মোচিত হয়। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় একটি বিদেশি পিস্তল, ৮ রাউন্ড গুলি, ২টি পিস্তল ম্যাগাজিন, ১৭টি শটগানের কার্তুজ, ১৬টি পিস্তল কার্তুজ, ৪টি দেশি অস্ত্র (চাপাতি ও ছুরি), ১টি হকি স্টিক, ২টি ইলেকট্রিক শকার, ১৩টি মোবাইল ফোন, ৩টি ওয়াকিটকি, ৪ লিটার বিদেশি মদ, ৭০০ গ্রাম গাঁজা ও ৩,০৪০ পিস ইয়াবা।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন—
১. মেহেদী হাসান মিঠুন (২৪), গাজীরচট, আশুলিয়া
২. মো. মোজাম্মেল ভূঁইয়া (৪৪), গাজীরচট, আশুলিয়া
৩. মো. জাহিদুল আলম (২৪), রাণীনগর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
৪. মাসুমা আক্তার রিয়া (২৩), মধ্য গাজীরচট, আশুলিয়া
আশুলিয়া আর্মি ক্যাম্পের অধিনায়ক লে. কর্নেল সজিবুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করছিল। রাতভর অভিযান চালিয়ে আমরা তাদের গ্রেফতার করেছিএবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধার করেছি। এসব আসামিকে আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
দ্বিতীয় অভিযান: কান্দাইলে গ্রেফতার ৩
একই রাতে জামগড়া আর্মি ক্যাম্পের অপর একটি দল কান্দাইলের রাজা-বাদশা মার্কেট এলাকায় অভিযান চালায়। ওই এলাকায়ও একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অবৈধ অস্ত্রের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করছিল বলে সেনা সূত্র জানায়।
অভিযানে নায়ন আলী (১৮), বাবর হোসেন বাবলু (৪৫) ও মো. গোলাম রাব্বি (১৮) নামে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল, ২০০ গ্রাম গাঁজা, একটি দেশি অস্ত্র ও অপরাধ সংক্রান্ত রেকর্ডযুক্ত দুটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
লে. কর্নেল সজিবুল ইসলাম বলেন, এই চক্র দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় অস্ত্রের মাধ্যমে ভয়ভীতি সৃষ্টি করছিল। সেনা অভিযানে তাদের গ্রেফতারের পর স্থানীয়দের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
আশুলিয়া থানার ডিউটি অফিসার জানান, সেনা ক্যাম্প থেকে মোট সাতজন আসামিকে অস্ত্র ও মাদকসহ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পৃথক দুইটি মামলা করে শুক্রবার আদালতে পাঠানো হয়েছে।
পৃথক পুলিশ অভিযান: অভিনেতা মন্টু ও ছেলে আটক
এদিকে শুক্রবার বিকালে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় চলচ্চিত্র অভিনেতা মন্টুর বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, গুলি ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এসময় অভিনেতা মন্টু ও তার ছেলেকে আটক করা হয়।
আশুলিয়া থানার ওসি আবদুল হান্নান সমতল মাতৃভূমি’কে জানান, মাদক ও অস্ত্র আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দুইটি সেনা অভিযান ও পুলিশের পৃথক অভিযানে আশুলিয়া এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অনেকটা স্তিমিত হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এলাকাবাসীর মতে, এ ধরনের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান নিয়মিত থাকলে সাভার-আশুলিয়া এলাকায় অপরাধ অনেকাংশে কমে যাবে।
