সাম্প্রতিক কমিশন বাগিয়ে নেওয়া গণপূর্তের দুর্নীতিবাজ নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুল ইসলাম ডিউক এর অপকর্ম আড়াল করতে এক শ্রেণির দালাল উঠে পড়ে মাঠে নেমেছেন। তবে এ দালাল চক্রের পেছনে লাখ লাখ টাকা দিয়ে মাঠে নামানোর অভিযোগ ফায়জুলের বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।এতে ডিউক কোন রকম ভয়-ভীতি অনুশোচনা লক্ষ্য করা যায়নি। বহাল তবিয়তে এখনও রয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তরে। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ থামছেই না। বিগত আওয়ামী সরকারের ১৬ বছর দুর্নীতির শীর্ষে থেকে সুবিধা ভোগ করে দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের অভিযোগ তুঙ্গে। কখনো ৩০%আবার ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের কাছ থেকে অনুর্ধ্ব ৫০% পর্যন্ত কমিশন নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে মহাখালী গণপূর্ত বিভাগে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ থাকলেও অদৃশ্য কারণে শাস্তি ভোগ না করে বহাল তবিয়তে রয়েছেন এ প্রকৌশলী। অধিক কমিশন বাগানের উদ্দেশ্য আ. লীগ দলীয় ঠিকাদারদের ডেকে এনে কাজ পাইয়ে দেওয়াসহ ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ চাউর হওয়ায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় গোটা অধিদপ্তরে। একটি বিশ্বস্ত সূত্রের দাবি, জুলাইয়ের রাজনৈতিক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রন্থ মহাখালী এলাকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন, বিআরটিএ ও সেতু ভবনের মেরামত কাজ দরপত্র আহ্বানের আগেই কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন প্রকৌশলী ডিউক। পরে ওটিএম পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করে অধিক কমিশনের উদ্দেশ্য নির্ধারিত কিছু আ’লীগ ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেন, যার বিনিময়ে কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। এ ডিভিশনটির প্রকৌশলী এভাবে মনগড়া সিদ্ধান্তে বৈষম্য তৈরীর কারণে প্রকৌশলী ডিউক বঞ্চিত ঠিকাদারদের রোষানলে পড়ে লাঞ্ছিত হতে পারেন বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন গণপূর্তের একটি অংশ। এছাড়াও জানুয়ারী মাস থেকে চলতি বছরের জুন ক্লোজিং পর্যন্ত প্রায়-ই অনুপস্থিত ছিলেন এ প্রকৌশলী। এ কারণে গোটা অফিস জুড়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। অথচ একই ডিভিশনের অন্যান্য নির্বাহী প্রকৌশলীরা নিয়মিত অফিস করলেও তিনি কখনো হজ্জ্ব ক্যাম্প কখনো সার্কেল অফিস আবার কখনো জোন অফিসে বসে ফাইলপত্র স্বাক্ষর করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়।
স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ পাওয়া কাজগুলো সাধারণত এলটিএম পদ্ধতিতে সম্পন্ন হলেও, অর্থবছরের শেষপ্রান্তে প্রায় অর্ধকোটি টাকার কাজ ওটিএম পদ্ধতিতে করে নিজের পছন্দের ঠিকাদারদের দিয়ে করানো হয়েছে। এছাড়াও, গত অর্থবছরের ৪-৫ কোটি টাকার বকেয়া বিল ছাড় করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের কাছ থেকে ১৫-২০ পার্সেন্ট পর্যন্ত ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রকৌশলী ডিউকের বিরুদ্ধে।
একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি, গোপণ কোটেশন দেখিয়ে ওই অর্থবছরে আরও প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাত করা হয়েছে।
একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করে বলেন, ডিউক দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিভাগটি হরিলুটের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। বিতর্কিত ঠিকাদারদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে কোটি টাকার প্রকল্প ভাগ বাটোয়ারা করে দিয়ে ফায়দা লুটেছেন।
অন্যদিকে ৪.১৮ কোটি ও ১.৪৮ কোটি টাকার বরাদ্দে সেতু ভবনের সিভিল, স্যানিটারি, অডিটোরিয়াম এবং রেক্টোফিটিং কাজ দিয়েছেন অনিক ট্রেডিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানকে। যাদের রেক্টোফিটিংয়ে নূ্্যনতম অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বঞ্চিত প্রতারিত সাধারণ ঠিকাদাররা।
৩.৬০ কোটি টাকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের সংস্কার কাজ দিয়েছেন এনএল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন-কে।
২.৫৩ কোটি টাকায় একই ভবনের অ্যালুমিনিয়াম জানালা, ফলস সিলিং, রং ও বাউন্ডারি ওয়াল সংস্কারের কাজ পেয়েছে খান এন্টারপ্রাইজ।
যদিও মার্চ মাসে এসব কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, সাম্প্রতিক জুলাই পর্যন্ত অনেক কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। একইভাবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের ৮টি বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যান্সার ইউনিট নির্মাণ প্রকল্পে উত্তরায় কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ভবন তৈরী, রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং, এসটিপি, ডিপটিউবওয়েল. আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার রিজার্ভার, পাম্প হাউজ, ও পানি বিতরণ লাইন, ফুটপাত, বাউন্ডারী ওয়াল লিংক কোরিডর নির্মাণে এসব কাজগুলোতে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ তুঙ্গে। এ সকল কাজে সিডিউল বহির্ভূত নিম্নমাণের নির্মাণ উপকরণ ব্যবহার করাসহ কাজ শেষ না হওয়া সত্ত্বেও চলতি বছরের জুন মাসে এডভান্স বিল দেয়া হয়েছে মোটা অংকের অবৈধ কমিশনের বিনিময়।
সূত্র জানায়, নির্দিষ্ট কিছু আ.লীগ ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের জন্য আলাদা তালিকা রাখা হয়। এই তালিকায় যাদের নাম আছে, তাদের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়া সাজানো হয় এমনভাবে যাতে তারাই কাজ পায়। অনিক ট্রেডিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন, এনএল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন, খান এন্টারপ্রাইজসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নিয়মিত এই সুবিধা ভোগ করছে।
দুর্নীতির আরেকটি বড় কৌশল হলো ‘প্রক্সি টেন্ডার’। অর্থাৎ, একই ঠিকাদার ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে টেন্ডার জমা দেয়, যাতে প্রতিযোগিতা কাগজে-কলমে হলেও আসলে একই গ্রুপ কাজ পায়। এতে সাধারণ ঠিকাদাররা পুরোপুরি বঞ্চিত হয়ে পড়েছেন।
মহাখালী গণপূর্তের প্রকল্পগুলোতে সিডিউল বহির্ভূত নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগ ব্যাপক। কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ভবন নির্মাণে ব্যবহৃত ইট, রড, সিমেন্ট, টাইলস সবকিছুতেই নিম্নমান পাওয়া গেছে। সেতু ভবনের সংস্কারেও দেখা গেছে একই চিত্র।
ডিউকের ঘনিষ্ঠ মহাখালী সাব-ডিভিশনের এসডিই ওয়াহিদ বিন ফরহাদের বিরুদ্ধেও একের পর এক অভিযোগ উঠছে। মতিঝিল গণপূর্তে দায়িত্বকালে ৪০-৫০% ঘুষের বিনিময়ে কাজ ছাড় করার নজির এখনও আলোচনায়। বর্তমানে মহাখালীতে বসেই তিনি কয়েকটি বেনামী প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করেন। কাজ পেলে ঠিকাদারদের কাছ থেকে সরাসরি নগদ অর্থ দাবি করেন, না হলে কাজ বন্ধ করে দেন।
এসব অনিয়ম দুর্নীতিসহ স্বেচ্ছাচারিতার বিষয় তাঁর বক্তব্য জানতে চেয়ে প্রকৌশলী ফয়জুল ইসলাম ডিউকের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও কোন রেসপন্স করছেন না। হোয়াটসঅ্যাপ খুদেবার্তা পাঠানো হলে কোন সাড়া মেলেনি।
ভুক্তভোগী ঠিকাদারদের দাবি, এই অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে পুরো বিভাগে সুশাসনের স্থিতি বিনষ্টসহ গোটা গণপূর্তের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। টাকা দিয়ে মাঠে নামানো দালাল চক্রের বিস্তারিত থাকছে দৈনিক স্বাধীন কাগজ এর পরবর্তী সংখ্যায়।
